প্রয়াত ৬০-এর দশকের কিংবদন্তী ফুটবলার সনৎ শেঠ। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। সকাল ১০ টা ৪০ নাগাদ বার্ধক্যজনিত রোগে জীবনাবসান হয় তাঁর। শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় পানিহাটি শ্মশানঘাটে। ১৯৩২ সালে পানিহাটি টি এন ব্যানার্জি রোডের বাড়িতে জন্ম তাঁর। পানিহাটির সকলের প্রিয় সনৎকাকুর মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া পানিহাটি টি এন ব্যানার্জি রোড সহ গোটা ফুটবল মহলে।
তাঁকে বলা হত 'ময়দানের বাজপাখি'। চূনী গোস্বামী, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একসঙ্গে খেলেছেন তিনি। তবে পিকে ও চূনীর থেকে বয়সে প্রবীণ ছিলেন তিনি। বছর খানেক আগেই চলে গিয়েছিলেন সনৎ শেঠের স্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন নবতিপর এই ফুটবলার। ভালো করে হাঁটতে পারতেন না। ক্র্যাচ ছিল তাঁর সঙ্গী। ১৯৪৯-৬৮ এই ১৯ বছর ময়দানে দাপিয়ে খেলেন তিনি। রেলওয়ে এফসি তাঁর প্রথম ক্লাব। তারপর এরিয়ান্স, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন তিনি। এক সময় এক সাক্ষাৎকারে সনৎ শেঠ বলেছিলেন, 'রেলওয়ে এফসি-তে আমার জন্ম। এরিয়ান্স আমার মামার বাড়ি। ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান আমার মাসি-পিসির বাড়ি।'
ফুটবল অন্তঃ প্রাণ প্রয়াত ফুটবলার রেখে গেলেন অনেক স্মৃতি। যখন যে দলের হয়ে খেলেছেন, সেই দলকেই নির্ভরতা জুগিয়েছেন। ১৯৫৪ সালে এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। এদিন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিনিধিদল প্রয়াত ফুটবলারকে ক্লাবের পতাকা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীও ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন সনৎবাবুর পরিবারকে। এছাড়া সমবেদনা জানাতে এদিন তাঁর বাড়িতে আসেন পানিহাটির বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, আসেন পানিহাটি পৌরসভার মুখ্য প্রশাসক মলয় রায়, উপ মুখ্য প্রশাসক সোমনাথ দে সহ অগণিত অনুগামী। বিধায়ক নির্মল ঘোষ জানান, তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে পানিহাটি স্পোর্টিং ক্লাবের ময়দানে তাঁর নামাঙ্কিত অ্যাকাডেমির প্রস্তাব দেওয়া হবে।
১৯৪৯ সালে সনৎ শেঠ ১৯-এর তরুণ তুর্কী। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা লিগে দাপিয়ে গোলকিপিং করছেন তিনি। হঠাৎতই একদিন তিনি ডাক পান রেলওয়ে এফসি ক্লাবের থেকে। সেই সময় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচে রেলওয়ে এফসির প্রথম গোলকিপার অসুস্থ ছিলেন। দ্বিতীয় গোলরক্ষকের চোট। সেই কারণেই ডাক পড়েছিল সনৎ শেঠের। সেই শুরু। এর পরে ১৯৫২ সালে এরিয়ান্সে সই করেন। ১৯৫৭ সালে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি ওঠে তাঁর গায়ে। পরের বছর মোহনবাগানে চলে আসেন। ছ’বছর সবুজ-মেরুনে খেলার পরে ফের এরিয়ান্সে ফেরেন তিনি। তিন বছর খেলে ইস্টবেঙ্গলে যান। লাল-হলুদে খেলেই ময়দানকে বিদায় জানান সনৎ শেঠ। ১৯৫৫ সালে রাশিয়া সফরেও গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে বলা হত এনসাইক্লোপিডিয়া। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। আজ তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া ফুটবল ময়দানে।