সময়টা ১৯৭৫, জরুরি অবস্থা চলছে। দেশের সর্বত্র একটা থমথমে ভাব। কিন্তু এরই মধ্যে খেলাধুলোতে টেনশন ছিল না মোটেই। একদিকে প্রথম এক দিবসীয় ক্রিকেট শুরু হচ্ছে বিলেতে সে বছরই, যার কোনও প্রস্তুতিই ছিল না ভারতীয় দলে। অন্যদিকে বাংলার ফুটবলে নব্য প্রতিভারা দাপটে খেলছে, কেউ ইস্টবেঙ্গলে, কেউ মোহনবাগানে, কেউবা মহমেডানে। কিন্তু সে ছিল বাংলা ফুটবলের যুগ। মোহনবাগান খুব একটা ভালো দল করে উঠতে পারেনি সে বছর। কিন্তু তারই মধ্যে দুই নব্য দাপুটে এসেছে সুব্রত ভট্টাচার্য ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গল থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন হাবিব-আকবরের জুটি। কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, কোনও সমস্যা নেই, যা দল আছে তাই নিয়ে লড়ে যেতে হবে। সেবার গোলে তরুণ বোস, চার ব্যাক সুধীর কর্মকার, অশোকলাল ব্যানার্জি, শ্যামল ঘোষ ও কাজল ঢালি। দুই হাফে গৌতম সরকার ও সমরেশ চৌধুরী। চার ফরোয়ার্ড সুরজিৎ সেনগুপ্ত, শ্যাম থাপা, রঞ্জিৎ মুখার্জি ও সুভাষ ভৌমিক। প্রদীপবাবু সুভাষকে ডেকে বললেন, ভোম্বল, আজ তোমার দিন, টোটাল টিমটাকে টেনে তোলো। জয় চাই।
এরপর ইতিহাস। এই প্রতিবেদক একবার সুভাষ ভৌমিককে প্রশ্ন করেছিল, ওটাই কি জীবনের সেরা ম্যাচ? সুভাষ জানিয়েছিলেন, ওভাবে বলা যায় না, তবে জীবনের স্মরণীয় খেলা খেলেছি ওই দিন। দাপটে বুলডোজারের মতো দৌড়ে গিয়ে বল জুগিয়েছেন কখনও বাঁদিক থেকে, কখনও ডান দিক থেকে। অনেকটা উইথড্রল হাফব্যাকের মতো খেলেছিলেন। গোল করলেন শ্যাম থাপাকে দিয়ে দুটি, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, রঞ্জিত মুখার্জি এবং দ্বিতীয়ার্থে রঞ্জিতের পরিবর্তিত শুভঙ্কর সান্যালকে দিয়ে একটি করে। ময়দানে চালু কথা আছে, সুভাষ নাকি দলের নানান খেলোয়াড়দের ডেকে ডেকে গোল করিয়েছিলেন। কিন্তু নিজে কোনও গোল করেননি। ঐতিহাসিক ছিল সেই ম্যাচ, যা আজও ডার্বির দুই দল খেলে উঠতে পারেনি।