Share this link via
Or copy link
চিরঞ্জিত (বিধায়ক -অভিনেতা): পেলে একটা অদ্ভুত নাম যেন কত কাছের। বাঙালির কাছে আরও কাছের হওয়ার অন্যতম কারণ নামটি 'পেলে'। যেন কী পেলে বা কোথায় পেলে বললেই পাওয়ার বিষয়টি এসে যায়। আমার স্কুল ছিল মিত্র ইনস্টিটিউশন। ছাত্র ভালোই ছিলাম কিন্তু তার সঙ্গে নেশা ছিল ফুটবলের। খুব খেলতাম ঢাকুরিয়ার মাঠে, স্ট্রাইকার ছিলাম। একবার ছেলেবেলায় একটা গোল করার পর চারিদিক থেকে চিৎকার এলো পেলে পেলে। ব্যস ওই তারপর থেকেই ফুটবলের সম্রাট পেলের ভক্ত।
আমাদের বাল্যকালে টেলিভশন ছিল না তাই ফর্মে থাকা পেলের খেলার সোনালী যুগ চাক্ষুষ করতে পারিনি। আমার বাবা ছিলেন প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট শৈল চক্রবর্তী কাজেই বাড়িতে অজস্র বইপত্র ম্যাগাজিন আসতো। ওখান থেকেই কাঁচি দিয়ে কেটে পেলের ছবি আমার লম্বা একটা বাঁধানো খাতায় লাগাতাম। অসংখ্য ছবির কালেকশন ছিল পেলের। আসলে পেলে ছিলেন আমার জীবনের প্রথম সেলিব্রেটি।সিনেমা থিয়েটারের দিকে ঝোঁক ছিল না। বাবা চিত্রশিল্পী ছিলেন বলেই তিনি পেলের কার্টুনও এঁকে ছিলেন, আমিও আঁকতাম। পেলের ছবিও তো এঁকেছি।
এডসন আরান্তেস ডো নাসিমান্তো, এই নাকি পেলের পুরো নাম। আসলে পর্তুগিজদের এ রকম বড় নাম হয়। কিন্তু ওদের ছোট একটা নাম থাকবেই। যেমন রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো ইত্যাদি সবই এদের নিক নাম। এক সময়ে আফ্রিকা থেকে পেলেদের পূর্বপুরুষদের তুলে এনেছিল পর্তুগিজরা এবং তাঁদের উপর অত্যাচার করে ব্রাজিলে রেখে দিয়েছিলো।
শক্ত কাজ থেকে ফাই ফরমাস খাটানোর জন্য এঁরাই ছিল পর্তুগিজদের দাস। এই কারণে দীর্ঘদিন ব্রাজিলে বসবাসকারী সাদা পর্তুগিজদের এরা একপ্রকার "দাস" ছিল। পরে অবস্থা স্বাভাবিক হলে এরাই খেলার মাঠ থেকে কফির বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। লক্ষ্য করে দেখবেন ব্রাজিল দলে কেউ সাদা, কেউ আবার কৃষ্ণবর্ণের।পেলে এমনই এক পরিবারভুক্ত ছিলেন।
দরিদ্র বাবা ফুটবল খেললেও চোট পেয়ে খেলা ছাড়তে বাধ্য হন। এই দরিদ্র পরিবার থেকে খেলোয়াড় হবে দুষ্কর ছিল ৫০ এর দশকে। কিন্তু পেলে তো হবু সম্রাট, তিনি পেরেছিলেন। বিশ্বজোড়া নাম করেছিলেন আজকের খেলোয়াড়দের মতো অবশ্য টাকা করতে পারেননি পেলে। তিনবার বিশ্বকাপ তাঁর কল্যাণে পেয়েছিলো ব্রাজিল। ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০, এই রেকর্ড ভাঙা দুরূহ। আমি মনে মনে ভাবি ফুটবলের সম্রাটের এই রেকর্ড যেন অক্ষুন্ন থাকে।
আমি পেলের খেলা দেখেছি সিনেমা হাউসে। পরে মোহনবাগানের সঙ্গে খেলা অবশ্য টিভিতে দেখি। আমি তখন একদিকে দূরদর্শনের সাংবাদিক-সংবাদ পাঠক আর অন্যদিকে সবে সিনেমা জগতে পা দিয়ে শুটিং শুরু করেছি কাজেই মাঠে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
পেলে ক্যান্সারের মতো যন্ত্রণায় ভুগে চলে গেলেন। এর আগে মারাদোনা চলে গিয়েছেন। মেসিও এবার বিশ্বকাপের পর নাকি আর খেলবেন না জানিয়েছেন।অতএব সিংহাসনটা শূন্য পড়ে, সম্রাটই শুধু নেই। যাও সম্রাট ,অনেক দিয়েছো এবার চির বিশ্রাম। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)