Share this link via
Or copy link
যাদের কাজ মানুষজনকে পথ দেখানো, তাঁরাই এখন কোন পথে চলবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। সুন্দরবনের (sundarban) গাইডদের অবস্থা কিছুটা এমনই। শিক্ষিত বেকার যুবকরা এই পেশায় ঢুকেছিলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু বছরভর পর্যটকদের (tourist) অভাবে যথেষ্ট সঙ্কটে তাঁদের পেশা। কোনওদিন দৈনিক ৩০ থেকে ৫০ টাকা রোজগার হচ্ছে তো কোনওদিন তাও হচ্ছে না বলেই দাবি সুন্দরবনের গাইডদের। আর সেই কারণে অনেকেই এই পেশায় হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিকল্প পেশার খোঁজও চালাচ্ছেন অনেকেই।
সুন্দরবন এলাকার শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের জন্য বিকল্প কর্ম সংস্থান খুলে দিতে তাঁদেরকে গাইড হিসেবে নিয়োগ করেছিল বন দফতর। সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে যে যৌথ বন পরিচালন কমিটি রয়েছে সেই কমিটির সদস্য অথবা তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরকেই এ বিষয়ে অগ্রণী সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় মোট ৬২ জন গাইড রয়েছেন। কিন্তু গাইড হিসেবে নিয়োগ করলেও বন দফতরের তরফে তাঁদেরকে আলাদা করে কোনও ভাতা বা সাম্মানিক দেওয়া হয় না। যে সমস্ত দেশীয় পর্যটক দল সুন্দরবনে ঘুরতে আসেন তাঁদের কাছ থেকে গ্রুপ পিছু ৬০০ টাকা এবং বিদেশী পর্যটক দলের কাছ থেকে ১৫০০ টাকা করে গাইডদের জন্য আদায় করে বন দফতর। সেই টাকাই দেওয়া হয় তাঁদের।
কিন্তু সিজনে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সুন্দরবনের পর্যটন মরশুমে গাইডদের বেশিরভাগ দিন কাজ জুটলেও বাকি ৮ মাস সেভাবে কোনও কাজ থাকে না। পর্যটন মরশুম শেষ হয়ে গেলেই বাকি সময় আর হাতে কোনও কাজ থাকে না। কিন্তু প্রতিদিন গাইডদের গড়ে ৪০ জন উপস্থিত থাকেন পর্যটকদের অনুমতি কেন্দ্রে। কিন্তু যদি এক বা দুটো পর্যটকদের গ্রুপ আসেন সুন্দরবন ভ্রমণে তাঁদের থেকে যা উপার্জন হয় সেই টাকা সেদিন উপস্থিত গাইডরা নিজেদের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করে নেন। এতে এক একজনের ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে দৈনিক আয় হয়। কোনও কোনওদিন তাও হয় না। আর তাই এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।
করোনা সংক্রমণের জেরে টানা লকডাউন ও দীর্ঘদিন সুন্দরবনের পর্যটন বন্ধ ছিল। সেই সময়ও যথেষ্ট সমস্যায় দিন কাটাতে হয়েছে এই গাইড ও তাঁদের পরিবারকে। পর্যটন চালু হওয়ায় সকলেই আশার মুখ দেখেছিলে। কিন্তু যেভাবে ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হতেই সুন্দরবন থেকে পর্যটকরা মুখ ঘুরিয়েছেন, তাতে আবার রোজগার একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেরা কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না এই গাইডের পেশায় যুক্ত মানুষগুলি।