যদি প্রশ্ন করা যায় কে এই শত্রুঘ্ন, তবে নেহাতই তা ছেলেমানুষী হয়ে যাবে। রাজনীতি তো পরের কথা, প্রাথমিক এবং প্রধান পরিচয় শক্তিশালী চরিত্রাভিনেতা তিনি। ইনস্টিটিউট পাশ করা এই অভিনেতা, পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান, রাম-লক্ষণ ভরত এবং তিনি। একসময় তাঁর ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু ফিল্মে আসার পোকাটা ছেলেবেলা থেকেই মাথায় ঘুরপাক খেত। পড়াশোনা শেষে তৎকালীন বোম্বেতে এসে ঠাঁই পাওয়া দুষ্কর ছিল, কারণ তখন নায়ক থেকে ভিলেন সকলেই প্রায় উজ্জ্বল বর্ণের। তাই শত্রুঘ্নকে প্রথমদিকে কেউ পাত্তাই দেয়নি।
শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসেন দেব আনন্দ। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি 'প্রেম পূজারী'তে এক পাকিস্তানি সেনার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। চরিত্রটি ছোট কিন্তু বিভিন্ন পরিচালকের নজরে চলে আসেন। এরপর অনেক দিন ভিলেনের চরিত্রে অভিনয়ে করেন বলিউডের বিহারীবাবু। এরপরই নায়কের চরিত্রে চুটিয়ে অভিনয়ে করতে থাকেন শত্রুঘ্ন। তপন সিংহের 'সফেদ হাতি' এবং পরে গৌতম ঘোষের অন্তর্জলি যাত্রাতেও অভিনয়ে করেছেন তিনি। সেরা চরিত্রাভিনেতা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন বহুবার।
রাজনীতিতে পরোক্ষভাবে আসেন ১৯৭৭-এ, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিরোধী প্রার্থীর হয়ে প্রচার শুরু করেন। এরপর যখনই ভোট এসেছে রাজনৈতিক শত্রু কংগ্রেসের বিরোধী হয়েই প্রচার করেছেন তিনি। পরে যোগ দেন বিজেপিতে। জীবনের প্রথম নির্বাচনে দিল্লির এক লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী কিন্তু বন্ধু রাজেশ খান্নার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পরাজিত হন। কিন্তু ফের নির্বাচিত হয়েছেন লোকসভায়। এরপর প্রতিটি লোকসভায় বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবার জয়ী হয়েছেন এই অভিনেতা। ১৯৯৮-এ অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। পরের ভোটে বাজপেয়ী সরকার পরাজিত হলেও, শত্রু কিন্তু বিজেপি প্রার্থী হয়ে জিততে থাকেন। ২০১৪-তে বিজেপির হয়ে জিতলেও, মোদী মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি এই অভিনেতা। ওই তখন থেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ২০১৯-এ আবার কংগ্রেসে যোগ দিয়ে পাটনাসাহিব থেকে পরাজিত হন।
শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে যোগ দেন তৃণমূলে এবং আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন তিনি। শনিবার ফল বেরোলে দেখা যায় প্রায় ৩ লক্ষ ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে পরাজিত করে রেকর্ড জয় পান শত্রুঘ্ন। ফের সংসদে ঢুকবেন তিনি। তবে এবার সরকারি অবস্থানে নয়, বরং বিরোধিতায়।