জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি আর তার জাঁক, সেকালের আলোচনার এক বিরাট বিষয়বস্তু। সাহিত্য থেকে সাজ-পোশাক, সমাজ সংস্কারকারী ভাবনা থেকে রন্ধনশৈলী-সবেতেই ছিল ঠাকুরবাড়ির ভিন্ন ছাপ। ঠাকুরবাড়িতে খাবারের আমন্ত্রণ মানেই এলাহি আয়োজন। চেটেপুটে উদরপূর্তির সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির বিশেষ রান্নার রেসিপি সংগ্রহ করার হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। কৌতূহলের অন্ত ছিল না।
আসলে, ঠাকুরবাড়ির রুচি মেনেই সে বাড়ির হেঁশেলেও ছিল বৈচিত্রের ছোঁয়া। প্রতিদিনই রান্না নিয়ে নিত্য-নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সুস্বাদু খাবারের জাদুতে মাত করে দিতেন ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বৌয়েরা। রবি ঠাকুরও নাকি বেশ ভোজনরসিক ছিলেন। আর মৃণালিনীদেবীও তাঁর স্বামীর জন্য পরম তৃপ্তিতে রাঁধতেন। তবে রান্নায় পাকা হাত থাকার দরুণ তাঁকে কম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। বেশ কিছু সময় ঠাকুরবাড়িতে রাত গড়িয়ে ভোর অবধি আড্ডা জমত। আর সেই আড্ডার মধ্যমণি থাকতেন অবশ্যই রবি ঠাকুর। আড্ডার মাঝে রাত দুটো নাগাদ তাঁর খিদে পেলে স্ত্রীর কাছে আবদার জুড়তেন। আর ঘুম থেকে উঠে হেঁশেলে ঢুকতে হত মৃণালিনীদেবীকে। সেও এক বিরাট বিড়ম্বনা।
অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথের সেজদা হেমেন্দ্রনাথের মেজ মেয়ে প্রজ্ঞাসুন্দরীদেবী তো বাংলার রান্নার জগতে কিংবদন্তী হয়ে গিয়েছেন। তাঁর রান্নার সুখ্যাতি ঠাকুরবাড়ি ছাড়িয়ে গুণীমানুষজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি নাকি নতুন নতুন পদ রেঁধে সবাইকে চমকে দিতেন। বাদ পড়তেন না কবিও।
সেবার কবিগুরুর পঞ্চাশতম জন্মদিন। বাড়িতে মাননীয় অতিথিরা আসবেন, তায় রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন বলে কথা। ঠাকুরবাড়ির রুচি ও যত্নের ছাপ বোঝাতে বিশেষ একটা খাবার তো চাই। আর সেই কথা মাথায় রেখে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী বানিয়ে ফেললেন বিশেষ এক ধরনের বরফি সন্দেশ। নাম দিলেন ‘কবি সংবর্ধনা বরফি’। ফুলকপি, ক্ষোয়াক্ষীর, কাজু, কিশমিশ, জাফরান পাতা আর রুপোর তবক দিয়ে তৈরি সন্দেশ খেয়ে কবিও নাকি বুঝতে পারেননি, ওই সন্দেশটি ফুলকপির তৈরি। এমনতরো খাবার খাইয়ে চমকে দিতেন সকলকে। সেই খাবার নাকি একটা সময় ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।