Share this link via
Or copy link
সৌমেন সুর: ঈশ্বরের নাম, লীলা,ও তার গুণাবলীকে সুর, তাল লয়ে বেঁধে এক অপূর্ব রসে নিবেদন করাকে বলে কীর্তন। বৈষ্ণব পদাবলীকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এই গান। বাংলায় যেভাবে কীর্তন একটি স্বতন্ত্র সঙ্গীতধারা সৃষ্টি করেছে, এমনটি আর কোথাও দেখা যায় না। কথিত আছে শ্রী চৈতন্যদেব স্বয়ং কীর্তনকে নামকীর্তন বা সংকীর্তন এবং লীলাকীর্তন বা রসকীর্তন- এই দুইভাবে শ্রেণীভুক্ত করেন। প্রহর ব্যাপী, অষ্টপ্রহর, এমনকি চব্বিশ প্রহর ব্যাপী ঈশ্বরের জন্ম নেওয়াকে বলে নামকীর্তন বা সংকীর্তন। শ্রীকৃষ্ণের অষ্টতর শতনামই সচরাচর গাওয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে বাল্যলীলা, গোষ্ঠলীলা, ঝুলন, সুবলমিলন, প্রভৃতি রাধাকৃষ্ণ লীলা, পর্যায়ভিত্তিক পদাবলী নিয়ে হয় লীলাকীর্তন বা রসকীর্তন। আমরা কীর্তনের অঙ্গ পাই যথাক্রমে পাঁচটি। যেমন, কথা, দোঁহা, আখর, তুক ও ছুট। তবে আরও একটি পদও আমরা পাই- সেটি হল ঝুমুর।
প্রত্যেক পালা শুরু করবার আগে রস ও পর্যায় অনুসারে একটা গৌরপদ গেয়ে নেওয়াই প্রচলিত প্রথা। এই পদকে বলা হয় গৌরচন্দ্রিকা। গৌরচন্দ্রিকা শুনেই শ্রোতারা বুঝতে পারেন এরপর রাধাকৃষ্ণ লীলার কোন পর্যায়ের গান গাওয়া হবে। খোল, করতাল সহযোগে গান গাওয়া হয় বলে কীর্তনকে সংকীর্তন বলে অভিহিত করা হয়। নৃত্য, গীত ও বাদ্য- এই তিনেরই স্থান ও গুরুত্ব কীর্তনে সমান। কীর্তন হল সম্মেলক গান। একজন মূল গায়ককে দোহারের সঙ্গ দিয়ে থাকেন। তবে গায়ক ও বাদকের পারস্পরিক মর্যাদা সমান। যাই হোক বিভিন্ন সময়ের প্রসিদ্ধ কীর্তনিয়াদের মধ্যে নন্দকিশোর দাস, রাধারমণ কর্মকার, ললিতা দাসী, নিমাই ভারতী, সত্যসাধন বৈরাগ্য, শ্যামলী দাসী,নরোত্তম জানা, নিমাই দাস বৈরাগ্য প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
কীর্তন গান এমনই শ্রুতিমধুর, এর রস আস্বাদনে আজও বাঙালির হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। তাই কীর্তন ও পালাকীর্তন সমান ভাবে মানুষের মন জয় করে নিয়েছে।