আজ কুড়মালি নববর্ষ। ২৭৭২ কুড়মাব্দ। কৃষিকর্যের শুভ সূচনা দিয়েই কুড়মিদের নববর্ষ উদযাপন। ভারতবর্ষের আদিমতম অধিবাসী মাহাত কুড়মী সম্প্রদায় মধু মাস,বিহা মাস,মওহা মাস,নীরন মাস,ধরন মাস,বিহন মাস,রপা মাস,করম মাস, টান মাস,সহরই মাস,মাইসর মাস,জাড় মাস-এই ১২ মাসে বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক আচার অনুষ্ঠানে মেতে থাকেন। সবগুলোই মূলত প্রকৃতি কেন্দ্রিক।মকরসংক্রান্তিতে পিঠে পুলি খেয়ে টুসু ভাসিয়ে বছর শেষ করেন আদিবাসী জনজাতি।
আজ সূর্য দক্ষিণায়ণ থেকে উত্তরায়ণ যাত্রা শুরু করে অর্থাৎ অক্ষায়ণ আর এই অক্ষায়ণ থেকেই আইখ্যান যাত্রা। এই দিন সকালে কাস্তে গরম করে চিড়ুদাগ দেওয়া হয়,তাছাড়া অনেকে বাইটা দিয়ে দড়ি তৈরি করেন আর সারা বাড়ি পরিস্কার করে স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে গরু বা মোষকে লাঙ্গল দিয়ে জুড়ে জমিতে আড়াই পাক লাঙ্গল করে বাড়িতে ফিরে আসেন পুরুষরা। একে বলা হয় হালচার বা হালপুইন্যা।
স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে বাড়িতে বরণ উপাচার হাতে অপেক্ষা করেন বাড়ির বধূরা। গবাদি পশুর পা ধুইয়ে শিঙে তেল ও সিঁদুর মাখিয়ে তাদের বরণ করেন খুব যত্ন করে। বেতের তৈরি পাত্রে এদিন গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয়। আর এভাবেই কৃষিকাজের শুভসূচনা করেন কুড়মী সম্প্রদায়ের মানুষ।
পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া তথা জঙ্গলমহল ছাড়াও ওড়িশা, বিহার,ঝাড়খণ্ড এবং অসম অর্থাৎ সমগ্র ছোটনাগপুরের কুড়মী সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করে থাকেন এই রীতি।
আদিবাসী কুড়মী সম্প্রদায়ের শিক্ষক বিপ্লব মাহাত বলেন,তাঁরা ভারতবর্ষের আদিমতম অধিবাসী। প্রকৃতির পূজারী। প্রকৃতিরই একটা অংশ কৃষি। কৃষক ছাড়া অন্ন যোগানোর বিকল্প নেই। তাই কুড়মাব্দের প্রথম দিনটিকে শুভদিন হিসাবেই ধরেই কৃষি কার্যের শুভসূচনা করা হয়। তাছাড়াও সারা গ্রামের মঙ্গলার্থে সব গ্রামে আজ গরাম পূজাও হয়। এইভাবেই দিনটি উদযাপন করেন এঁরা।