একটা সময় পাড়াতে ডাক উঠত ফেরিওয়ালার কাছ থেকে 'জয়নগরের মোয়া, সন্দেশ শোনপাপড়ি'। সেই ফেরিওয়ালারা কোথায় হারিয়ে গেল? স্কুলগুলির সামনে এই ফেরিওয়ালাকে আজকের মধ্য বয়সের সবাই দেখেছে। কিন্তু আজকের তরুণ প্রজন্ম দেখেছে কি? দেখেছে হয়তো। বহুদিন স্কুলগুলি বন্ধ ছিল। ফের খুলল তো ফের বন্ধ হয়ে গেল। নলেন গুড়ের ফেরিওয়ালারাই বা গেল কোথায়?
রাত পোহালেই পৌষ সংক্রান্তি। এই দিন বাঙালি হিন্দুদের বাড়িতে হয়তো নিরামিষ রান্না থাকবে। কিন্তু মুখরোচক তো বটেই। ফুলকপি, বাঁধাকপি থেকে মুলোর ঘন্ট ইত্যাদি সঙ্গে মুগ বা মোটর ডাল। ভাজাভুজি তো নিশ্চই থাকে। বিকেলে পিঠেপুলি। বলা হচ্ছে বটে, কিন্তু আজকালকার পরিবার পালন করেন কি আদৌ? মানার বিষয় নয়, ওই একটা দিন মুখের স্বাদ বদল আর কি।
করোনা আবহে গুড়ের ফেরিওয়ালা আসে না, কে জানে হয়তো চাষবাস করছে। গুড় কিনতে এখন মুদির দোকানই সম্বল। একটা সময় গুড় দিয়ে কত কী বানানো হত। পুলিপিঠে বাদ দিয়েও পাটিসাপ্টা, গুড়ের পায়েস ইত্যাদি। দুধ জ্বাল দিয়ে গুড় ফেলে কত পিঠে। আতপ চাল, দুধ, গুড় জ্বাল দেওয়া পায়েস। প্রবাদপ্রতিম সত্যজিৎ রায় গুড়ের ভক্ত ছিলেন, সেটা তাঁর লেখা থেকে বোঝা যায়। তাঁর বাবা প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুকুমার রায় আবার এক ধাপ এগিয়ে লিখেছিলেন, সেরা খাদ্য মানে পাউরুটি আর ঝোলা গুড়। সত্যজিৎবাবু নতুন গুড়ের সন্দেশ খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন।
গুড় বাদেও গুড়ের তৈরি জয়নগরের মোয়া। অপূর্ব স্বাদ এই বস্তুটির। এটা খায়নি, এমন মানুষ আছে নাকি? কিন্তু দাম বেড়েছে প্রবলভাবে। তাই ফেরিওয়ালারা বলছে, ধুস, বিক্রিই হচ্ছে না। তবুও হয়তো পাবেন নামজাদা মিষ্টির দোকানে। আর মুড়ি বা খইয়ের মোয়া তো আজকের গিন্নিবান্নিরা বানাবার কষ্টই করেন না। ফলে মুখের স্বাদ মুখে যাচ্ছে কি?