শোনা যায় পুরাণের যুগে নাকি মূল রান্না হতো ঘি দিয়ে। অর্থাৎ রামায়ণ মহাভারতের পর্বে মাছ মাংস খাওয়া হতো কিনা বিবরণ নেই কিন্তু পোলাউ সবজি ইত্যাদি রান্না হতো ঘি দিয়ে। রাজবাড়িতে রান্না হতো ঘি দিয়ে। অবশ্য বলা হতো ঘি তেল দিয়ে সমধুর রন্ধনে পটু ছিলেন দ্রৌপদী। দ্রৌপদীর রান্নার প্রশংসা মহাভারতের পরতে পরতে রয়েছে।
তবে ইতিহাসের পাতায় ঘিয়ের রান্নার বিবরণ পাওযা যায়। আমাদের ইতিহাসে চৈতন্যদেব বৈষ্ণব ধর্মের প্রবতক ছিলেন। বৈষ্ণব ধর্মের মানুষ নিরামিষাশী ছিল। কিন্তু ওই ইতিহাসে আমরা দেখেছি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে তারা দুধ ঘি খেতেন। উত্তরভারত থেকে দক্ষিণ ভারতের বহু মানুষ নিরামিষাশী। আজও তারা মাছ মাংসের বিকল্প হিসাবে দুধ ঘি খেয়ে থাকে। মুঘল সাম্রাজ্যে বা তার আগে ইসলামিক ভারতে ঘিয়ের প্রচলন ছিল। সুলতানদের পোলাউ বা বিরিয়ানি মানেই প্রচুর টাটকা ঘি খেতেন তারা। সুলতানরা ভাজাভুজিও খেতেন ঘি ব্যবহার করে।
আজকাল পেটের রোগীরা বা উচ্চ রক্তচাপ যুক্ত মানুষেরা ঘি খেতে ভয় পায় কিন্তু ডাক্তারবাবুরা বলেন ঘি যদি বিশুদ্ধ হয় এবং টাটকা থাকে তবে পেটের রোগ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। একসময়ে পক্স হলে তাকে নিয়মিত ভাবে ঘিয়ের রান্না খাওয়ানো হতো। বড় কোনও রোগমুক্তি হওয়ার পর বেশ করে ঘি দুধ খাওয়ার পথ্য দিতেন ডাক্তাররা।
আজকাল কি কেউ আর ঘিয়ের লুচি, রাধাবল্লভী কিংবা কচুরি খেয়েছেন কি? কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টির দোকানগুলিতে আজও শুধু ঘিয়ের খাওয়ার পাওয়া যায়। এই ঘি দিয়ে রসগোল্লা সন্দেশ ছাড়া সমস্ত মিষ্টি ঘি দিয়ে বানানো হতো। ঠাকুর রামকৃষ্ণ কলকাতায় থিয়েটার দেখতে গেলে গিরিশ ঘোষ তাঁকে বিশুদ্ধ ঘিয়ের লুচি আলুরদম খাওয়াতেন। এখনও বাঙালির প্রিয় বিরিয়ানি খেতে গেলে ঘি লাগেই প্রচুর।
করোনা আবহ চলেছে। শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে গেলে অবশ্যই বিশুদ্ধ ঘি খেতেই পারেন ডাক্তারের নির্দেশ নিয়ে। আজও বাজারে বিশুদ্ধ ঘি পাওয়া যায় কেবল খুঁজতে হবে নাকি হাতের কাছে পাওয়া যাবে ?