ছেলের নাম আছে, কিন্তু পদবী নেই! শুনলেই কেমন যেন একটু খটকা লাগছে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, এমনই এক বিরলতম ও অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়েছেন কল্যাণী পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রায়দম্পতি। প্রণব রায় ও প্রিয়াংকা বিশ্বাস রায় তাঁদের একমাত্র ফুটফুটে ছেলের নাম রেখেছেন প্রিয়ার্ণব তেজ। কিন্তু জন্মের শংসাপত্রে পদবির জায়গাটা শূন্য।
কারণ হিসেবে পেশায় প্রকৌশলী প্রণববাবু বলেন, মানুষকে নিয়ে এখন ধর্মীয় ভাবাবেগ ও জাতপাতের খেলা চলছে। মানুষের মধ্যে যাতে জাতপাতের ভেদাভেদ না আসে, ধর্মীয় ভেদাভেদ না আসে, তার জন্যই এই উদ্যোগ। তাঁর মতে, মানুষ তাঁর কর্মের মাধ্যমে পরিচিত হবে। পদবীর মাধ্যমে নয়। নাম তো একটা আইডেন্টিটি ছাড়া আর কিছুই নয়। পদবি যোগ করে সেটাকে ভারী করা হয়।
উল্লেখ্য, এই দম্পতিই ছেলেকে ঘুম পাড়ানোর জন্য নিজেরাই বানিয়েছেন ছেলে ভোলানো গান। নিজেরাই লিখে, সুর করে, স্টুডিওতে গেয়ে রেকর্ড করে রেখেছেন। রোজ রাতে ওই গান শুনেই এখন ঘুমায় তেজ!
তবে এই দম্পতি নয়, গোটা পরিবারও এতেই থেমে থাকেননি। ছেলের প্রথম জন্মদিন উপলক্ষে বাড়ির ৬ জন সদস্য সবাই কল্যাণী মেডিকেল কলেজে মরণোত্তর দেহদানও সেরে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে প্রণববাবুর বাবা, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বছর ৬৭-র প্রমথ রায় বলেন, মৃত্যুর পর এই নশ্বর দেহ যদি মানুষের কোনও কাজে লাগে, তাতেই আমরা গোটা পরিবার ধন্য হব।
প্রিয়ার্ণব তেজ-এর মা প্রিয়াংকা বিশ্বাস রায়, বছর ৩০-এর স্কুলশিক্ষিকা দেহদান তো করেইছেন, সঙ্গে বাচ্চা জন্মানোর পরপরই নিজের স্তনের অতিরিক্ত দুধ পাম্পিং করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকিং করে কলকাতা মিল্ক ব্যাঙ্কে দান করেছেন। আর ছেলের জন্মদিনের ৫ দিন আগে নিজের নয়নভোলানো লম্বা চুল থেকে ১৪ ইঞ্চি কেটে ক্যান্সার রোগীদের জন্য দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রিয়াংকা বলেন, আমার দিদিমা একজন ক্যান্সার রোগী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি চুলের ব্যাপারে খুব সৌখিনও ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তাঁর সেই চুল কেটে ফেলতে হয়। দিদার মনের সেই কষ্ট আজও ভুলতে পারিনি। সেই ভাবনা থেকেই চুল দান। আমাদের মধ্যে এখনও এসব নিয়ে অনেক কুসংস্কার আছে। আমরা চাই মানুষ এগুলো দেখে উৎসাহিত হোক, এগিয়ে আসুক। সমাজ সংস্কারমুক্ত হোক।