বলিউডের প্রতিভাবান চরিত্রাভিনেতা কেষ্ট মুখার্জিকে প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দিয়েছিলেন বিখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক তাঁর নাগরিক ছবিতে। এরপরে পাঁচের দশকে মুম্বই চলে আসেন তিনি। হিন্দি ছবিতে প্রথম সুযোগ দেন হৃষিকেশ মুখার্জি তাঁর মুসাফির ছবিতে। এরপর বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে তিনি অভিনয় করলেও সেভাবে নাম করতে পারেননি।
পরিচালক অসিত সেনের মা ঔর মমতা ছবিতে প্রথম মাতালের চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে চমকে দেন কেষ্ট। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখার পরে মাতালের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাঁর দরজায় প্রযোজক, পরিচালকদের লাইন পড়ে যায়। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি কেষ্ট মুখার্জিকে। তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই বলিউডের স্টার মাতাল চরিত্রাভিনেতাতে পরিণত হন।
সত্তর, আশির দশকে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন বিভিন্ন হিন্দি ছবিতে। পর্দায় কেষ্ট মুখার্জিকে দেখলেই হলে হাসির রোল পড়ত, দর্শক আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত। সত্তরের দশকে তাঁর জনপ্রিয়তা এমন জায়গায় পৌছেছিল যে প্রায় অধিকাংশ ছবির চিত্রনাট্যে কেষ্টর জন্য অভিনব মাতালের চরিত্র ও সংলাপ লেখানো হতো প্রযোজক, পরিবেশকদের ফরমাইশ মেনে। নাম, যশ, অর্থ ও সম্মান, কোনও কিছুরই অভাব ছিল না তাঁর জীবনে। কিন্তু পর্দায় তাঁকে যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যেত, তার সঙ্গে বাস্তব জীবনের কেষ্ট মুখার্জির কোনও মিল ছিল না। বাস্তব জীবনে কেষ্ট ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিত, মার্জিত, রাশভারী মানুষ। চা, ট্রিপল ফাইভ সিগারেট ছাড়া ওনার কোনও নেশা ছিল না। কেষ্ট মুখার্জি কোনওদিন মদ্যপান করেননি। ভাবা যায়?! জীবনে মদ না খেয়েও একের পর এক দুর্দান্ত মাতালের চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন অবলীলাক্রমে। এমনিতে আগাগোড়া বাঙালি কেষ্ট মুখার্জি ছুটির দিনে বাড়িতে জমিয়ে বাঙালি খাবার রান্না করে পরম যত্ন সহকারে স্ত্রী ও ছেলেদের খাওয়াতেন।
সিনেমায় অভিনয় ছাড়াও সারা পৃথিবীতে শো করতেন তিনি। তাঁর শো-এর সাংঘাতিক চাহিদা ছিল। আরবে শেখেরা তাঁর কমেডির বিশেষ ভক্ত ছিলেন। সেখানে বিভিন্ন মেহেফিলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হতো, সেখানে কেষ্টর কমেডি দেখে হেসে লুটিয়ে পড়তেন শেখেরা। নিজেদের গলার বহুমূল্য সোনার হার খুলে তাঁকে পরিয়ে দিতেন। ১৯৮২ সালে কেষ্ট মুখার্জির মৃত্যু হলেও আজও দর্শকদের মনে তিনি অমর হয়েই আছেন।