২০ এপ্রিল, ২০২৪

Special: অটুট বিশ্বাস ও সত্যবাদীতায় তপোবন দুহিতা শকুন্তলা (শেষ পর্ব)
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2022-11-04 18:09:34   Share:   

সৌমেন সুর: মেনকার গর্ভে এক শিশুকন্যার জন্ম হয়। কিন্তু মেনকা সেই শিশুকে ফেলে স্বর্গে চলে যান। মালিনী নদীর তীরে সদ্যজাত শিশুকন্যা। সেই সময় মহর্ষি কন্ব নদীতে স্নান কোরতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ চমকে ওঠেন। বনের মধ্যে নদীর তীরে এক শিশুকন্যাকে পশুপাখিরা আগলে রেখেছে। কন্ব মুনি সেই শিশুকন্যাকে তুলে আশ্রমে নিয়ে আসেন। যেহেতু পশুপাখি বাচ্চাটিকে রক্ষা করেছে, তাই তার নাম দেন শকুন্তলা। 

কন্ব মুনির আশ্রমের পরিবেশ বেশ সুমধুর। নানা পাখীর কলতানে, ফুলের সুবাসে আর নানা ফলের গাছের ছায়ায়, আশ্রমের পরিবেশ এককথায় অনন্য সুন্দর। এক অদ্ভুত মায়াময় পরিবেশ। এই সুন্দর পরিবেশে শকুন্তলা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো। বনের পশুপাখিরা শকুন্তলাকে বন্ধু করে নিয়েছিল। একদিন রাজা দুষ্মন্ত মৃগয়া করতে করতে এই কন্ব মুনির আশ্রমে এসে হাজির। আশ্রমের পরিবেশ দেখে রাজা মুগ্ধ হয়ে যান। চারদিক ঘুরে ঘুরে আশ্রম দেখছিলেন রাজা দুষ্মন্ত। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ে এক রমণীয় কন্যার উপর। কন্যা স্বয়ং শকুন্তলা। 

চার চোখের মিলনের বন্ধনে ধরা পড়ে দু'জন। উভয় উভয়ের প্রতি অনুরক্ত হয়। এই প্রেম অবশেষে সমাপ্ত হয় গান্ধর্ব বিবাহে। বিবাহের আগে শকুন্তলা একটা শর্ত দেয়, 'আমার একটা প্রার্থনা আছে যে, আমার গর্ভে পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলে আপনি জীবিত অবস্থায় তাকে যুবরাজের মর্যাদা দেবেন এবং পরবর্তীতে সে হবে মহারাজ।' কথা শুনে রাজা সম্মত হলেন। এরপর কয়েকদিন অতিবাহিত করার পর রাজা চলে গেলেন নিজ রাজ্যে।

এদিকে শকুন্তলা প্রসব করেন এক পুত্রসন্তান। অনিন্দ্যসুন্দর রূপ সে শিশুর। ধীরে ধীরে সে বড় হতে লাগলো। বালক অবস্থায় অত্যন্ত বলবান, তেজস্বী এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যুবরাজ হওয়ার সব লক্ষ্মণ দেখে মহর্ষি কন্ব শকুন্তলাকে পতিগৃহে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।   এখানে ঘটল এক বিপত্তি। রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলা আর তাঁর পুত্রকে কিছুতেই মেনে নিলেন না। এটা যে সত্য, তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন রাজা। তাঁর কোনও ঘটনা কিছুই মনে পড়ছে না।

রাজা ভরা সভায় শকুন্তলাকে তীব্রভাবে অপমানিত এবং লাঞ্ছিত করলেন। যেমন ঘটেছিল দ্রৌপদীর বেলায়। শকুন্তলাও দমবার পাত্রী নয়। আসলে নারীর ক্ষেত্রে এমনটাই দস্তুর। অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা, উদাসীনতা অবিশ্বাস গায়ে মেখে নারীকে বহুবার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি আদায় করে নিতে হয়েছে। শকুন্তলা দুষ্মন্তকে ছাড়েননি, রাজাকে সপাট তর্কবাণে জর্জরিত করে দিয়েছিলেন। নারীর অটুট বিশ্বাস এবং সত্যবাদীতার পরিচয় শকুন্তলার চরিত্রে। আবহমানকাল ধরে এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়েই নারী আপন ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর।    


Follow us on :