যে বাঙালি চা খায় না, তার বাঙালিয়ানা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যেতেই পারে। বাঙালির চায়ের আড্ডা এই নববর্ষেও প্রবলভাবে ছিল। গত দু'বছর করোনা আবহে চায়ের দোকানগুলি ব্যবসায় মন্দার মুখ দেখেছে। কিন্তু সব কিছু নর্মাল হতেই ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে চায়ের ঠেক। ফুটপাথের চা বাঙালির কাছে সবথেকে আকর্ষণীয়। রবীন্দ্রনাথ চা খেতে ভালোবাসতেন কিনা জানা নেই, কিন্তু শরৎচন্দ্র থেকে তারাশঙ্কর হালফিলের জয় গোস্বামী প্রত্যেকে চা-ভক্ত।
চায়ের রকমভেদ আছে, তা নিয়ে রিসার্চ করা যেতে পারে। সত্যজিৎ রায় মদ্যপান করতেন না, কিন্তু চা সিগারেটের ভক্ত ছিলেন। সত্যজিৎবাবুর প্রিয় চা ছিল এক্কেবারে দার্জিলিঙের মকাইবাড়ির চা। এই চা ছাড়া, তিনি চা খেতেন না। তাঁর বাড়িতে যে যখন যেতেন, আপ্যায়নে চা অবশ্যই বরাদ্দ ছিল। মৃণাল সেন দুধ ছাড়া চা খেতেন কাঁচের গ্লাসে। সেই গ্লাস ছিল বড়, এবং কানায় কানায় চা ভরা থাকতো। উত্তমকুমারের পছন্দ ছিল ভাঁড়ের চা। স্টুডিওতে আসলেই ভাঁড়ের চা চলে আসত মহানায়কের জন্য। সৌমিত্র একেবারেই সত্যজিৎ রায়ের মতো মকাইবাড়ির চায়ের ভক্ত ছিলেন। তাপস পালের বাড়িতে গেলে দার্জিলিঙের সুগন্ধি চা নিজের হাতে তৈরি করে খাওয়াতেন তিনি। সৌরভও চা ভক্ত।
ওপার বাংলাতেও বিস্তর চায়ের চল রয়েছে। বাংলাদেশে খুব বেশি দার্জিলিং চা সর্বত্র পাওয়া যায় না। ওখানে মূলত অসম চায়ের প্রচলন, কিন্তু এখানেই মজা। ওদেশে কতরকম ভাবে কত রেসিপিতে যে চা তৈরি হয়ে থাকে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। প্রথমত আমাদের রাজ্যের মতো দুধের চা চলে সর্বত্র। দ্বিতীয়ত আমাদের যেমন লেমন টি, তেমন ওদেশে রয়েছে তেঁতুল চা। হালকা লিকারের মধ্যে তেঁতুলের রস এবং লঙ্কা কুঁচি দিয়ে তৈরি। এতে চিনি দেওয়া হয় না। অনেকটা স্যুপের মতো খেতে। রয়েছে নলেন গুড়ের চাও। রয়েছে মশলা চা। রয়েছে সরের চা, এছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যের চা। আসলে ওপার বাংলার মানুষ চা-কে নানাভাবে বানিয়ে পরিবেশন করতে পছন্দ করে।