শোক মানুষের চলমান জীবনকে স্তব্ধ করে দেয়, ঘটে ছন্দ-পতন। সংসার নামক যন্ত্রের তার ছিড়ে জীবন হয়ে ওঠে বেসুরো। সেইরকমই এক ঘটনা কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের। স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একসময় তাঁর ভরা সংসার ছিল। দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু বছর কয়েক আগে হঠাৎই তাঁর জীবনে ছন্দপতন। স্বামী ও সন্তানদের ছেড়ে পরপুরুষের হাত ধরে স্ত্রী অন্যত্র গিয়ে সংসার পেতেছেন। সেই থেকেই সমস্যা। প্রভাত বর্মণ নামে এক দৃষ্টিহীন শিল্পী। তাঁর বাড়ি কোচবিহার (coochbihar) জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব ছোট বয়সেই অসুখে ভুগে প্রভাতবাবুর দু'চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তারপর থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হিসাবে তিনি সঙ্গীতকে আঁকড়ে ধরেন। স্ত্রীর হাত ধরে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে গান গেয়ে ভালোই রোজগার করতেন। গানই হয়ে ওঠে তাঁর জিয়নকাঠি। কিন্তু আচমকা স্ত্রী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে সংগীতের প্রতি সেই টানটা তিনি আর খুঁজে পাচ্ছেন না। শোকে বিহ্বল হয়ে প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন সঙ্গীত সাধনা।
দুই নাবালক সন্তানের মায়ের জন্য আকুতি আর বৃদ্ধ বাবার অসহায়তা তাঁকে আরও ভারাক্রান্ত করে তোলে। ছেলে-মেয়ে আর বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে খুবই অসহায় অবস্থার মধ্য নিয়ে চলছে দিনযাপন। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু তিনি আর ফেরেননি। দিব্যি অন্য পুরুষের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন। স্ত্রী চলে যাওয়ার প্রায় ৮ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আজও তার ফিরে আসার অপেক্ষায় পথ পানে চেয়ে থাকেন শিল্পী প্রভাত। এদিকে সংসারের হাল ধরতে নাবালক পুত্র পাড়ি দিয়েছেন ভিন রাজ্য রোজগারের আশায়। মেয়ে স্থানীয় বিদ্যালয়ের পঞ্চমের ছাত্রী। বৃদ্ধ বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে ঘরে বসা।
সংসার চলে প্রতিবন্ধী ভাতার ১ হাজার টাকা ও রেশন থেকে পাওয়া চালের ওপর নির্ভর করে। কোনওরকমে দুবেলা দু-মুঠো অন্ন জোগাতে তাঁর হিমসিম অবস্থা। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর অন্য কোনও সরকারি সহায়তা তাঁর মিলছে না বলেই জানান তিনি। এখন আর কোথাও যান না গান গাইতে। আর যাবেনই বা কী করে? তিনি যে একেবারে দৃষ্টিহীন। ভুলতে বসেছেন সঙ্গীতের সুর। তবুও মাঝে মধ্যে হাতে তুলে নেন সাধের দোতারা। গানের সুরে ভেসে ওঠে তার জীবন যন্ত্রণার "আমার কপাল মন্দ- হলুম কানা, ভাগ্যের দোষে।"