ভারত স্বাধীন হওয়ার পর নেহরু সরকার ব্রিটিশের দেওয়া বিভিন্ন স্থানের নাম দ্রুত পাল্টানোর ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু এত যুগ পর প্রশ্ন এটাই, আদৌ সেই নতুন নাম ব্যবহৃত হচ্ছে কি? সারা দেশ বাদ দিন, খোদ পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তিত নাম আমরা কতটা ব্যবহার করি? প্রথমে ধরা যাক বিমানবন্দরের নাম। নেতাজি সুভাষের নামে বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় যাত্রী ক্যাব বা গাড়িকে নির্দেশ দেয়, চলো, ক্যালকাটা এয়ারপোর্ট।
এরপরই আসে কলকাতা। আগে তিনটি নাম ছিল ক্যালকাটা, কলকাতা এবং কোলকাত্তা। নাম পাল্টে কলকাতা হওয়ার পরেও বহু বিতর্কসভায় অবাঙালিরা ক্যালকাটা শব্দটি উল্লেখ করেন।
নাম পরিবর্তন বিস্তর হয়েছিল বাম জমানায়। তারা ডালহৌসি নাম পাল্টে এমন বিশাল এক নাম দেয় যে অদ্যাবধি তাদের দলেরও কেউ বিনয় বাদল দীনেশ বাগ নামটি করেননি। সংক্ষিপ্ত একটি নাম দেওয়া হয়েছে বটে বিবিডি বাগ, তাও কেউ বলে না। সেই আদ্দিকালের ডালহৌসি নামটিই চলেছে। রেলের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু মেট্রো স্টেশনের নামকরণ করেছিলেন। টালিগঞ্জের পরে যত স্টেশন রয়েছে, সেগুলিতে তাঁর দেওয়া নামই ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু টালিগঞ্জের নাম দিয়েছিলেন উত্তমকুমারের নামে। মানুষ টিকিট কাটার সময় টালিগঞ্জই বলছে এবং টিকিটও পাচ্ছে।
উত্তর কলকাতার বহু রাস্তার নাম পরিবর্তিত হয়েছিল। যেমন কর্নওয়ালিস স্ট্রিট আজ বিধান সারণি। কিন্তু বিডন স্ট্রিটের নাম হয়েছিল অভেদানন্দ রোড। কেউ জানে কি? বিখ্যাত ধর্মতলা স্ট্রিটের নাম লেনিন সরণি, ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্ক স্ট্রিটের মাদার টেরেসা সরণি দেওয়া হয়েছিল, কেউ ব্যবহার করেন কি?
এরকম হাজারো নাম পরিবর্তিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরাতন নামই থেকে গিয়েছে মানুষের মুখে মুখে। নাট্য ও সিনেমা অভিনেতা বা পরিচালক কৌশিক সেন জানিয়েছিলেন, নাম পাল্টালেই হয় না, মানুষের মনের মধ্যে গ্রহণযোগ্য কিনা, সেটা দেখে নিতে হয়।