হাঁড়ি, কলসি, কুঁজোর দিন শেষ। তীব্র গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে বাজার চলতি বিভিন্ন কোম্পানির ঠান্ডা পানীয়ই (Cold drinks) যেন ভরসা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অতিপ্রাচীন কেন্দার মৃৎশিল্পীদের (Potter) রুটিরুজিতে টান।
পুরুলিয়ার গরম মানেই ফুটিফাটা পুকুর। ভূগর্ভস্থের জল (Underground Water) নীচে নেমে যাওয়ায় জলের নাগাল পায় না নলকূপ (Tubewell)। শুকনো বুক নিয়ে আগুন ছড়ায় কংসাবতী, দ্বারকেশ্বর। মাইলের পর মাইল উজিয়ে মহিলারা জল নিতে আসেন। প্রায়শই দেখা যায় সে চিত্রও। প্রকল্পের পর প্রকল্প যায়, কিন্তু এই ছবি বদলায় না।
পুরুলিয়ার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম (Remote Village) কেন্দা। ২০০ টিরও বেশি পরিবার একসময় মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা প্রায় একযোগে ১০০ টি গ্রামে রান্নার বাসন (Utensils) থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চাদের খেলনার (toy) যোগান দিতেন। তাঁদের হাত দিয়ে তৈরি হত অজস্র পোড়ামাটির হাতি, ঘোড়া, যা আদিবাসীদের গরাম থানে প্রকৃতি পূজাতেও ব্যবহার করা হয়। আর এর মাধ্যমেই চলত তাঁদের সংসার, টান পড়ত না তাঁদের রুজিরুটিতে।
বর্তমানে ফ্রিজ, ফাইবারের কলসি, স্টিলের থালাবাসনের ব্যবহার পোড়ামাটির শিল্পকে আধুনিক সমাজ থেকে দূরে রেখেছে। আধুনিক প্রযুক্তির (Modern technology) ব্যবহারে সেই দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
হাড়ভাঙা খাটুনি দিয়ে সংগ্রহ করা পুরুলিয়ার রুখা মাটিকে শিমুল তুলার মতো নরম করে তোলা। তারপর তা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বাসনপত্র। কুমোর পাড়ার অনেকের দাবি, মাটির কলসির জল খেলে পেটের রোগের সমস্যা দূর হয়। এই জল স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। কিন্তু আধুনিকতার ঘেরাটোপে এই পারিপার্শ্বিক সমাজ নিজেদের অজান্তেই যেন ভুলে গেছে সেই কথা। তাই মাটির জিনিসপত্র তৈরি হলেও, তা বিক্রি হয় না বললেই চলে, জানাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।
আর্থিক অনটনের কারণে বিকল্প জীবিকা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। তবে এর মধ্যেও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন অনেকেই। কিন্তু আদৌ কি কেন্দার মৃৎশিল্পীদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে? আধুনিক সমাজে কি জায়গা পাবে মৃৎশিল্পীদের তৈরি মাটির হাঁড়ি-কলসি? প্রশ্ন ফিরছে কেন্দার মৃৎশিল্পীদের মুখে মুখে।