২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Mother: বজ্র কঠিন রাজনীতিবিদরা মায়ের মৃত্যুতেও কাজে ব্যস্ত, মোদী-মমতা রীতি একই
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2022-12-30 14:45:25   Share:   

প্রসূন গুপ্ত: মনে পড়ে যাচ্ছে একটা ঘটনার কথা। সময়টা ৭০ দশকের প্রথম দিকে। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। হঠাৎ তিনি খবর পেলেন মা অসুস্থ। কাজ চলছিল রাইটার্স বিল্ডিংয়ের। কিছু সময় চুপ করে থেকে ফের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েলেন 'মানুদা'। শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেলো না দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের কন্যা তথা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মাকে। কাজ শেষে পারলৌকিক কাজে চলে গেলেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর। পরদিন একেবারে ধড়াচুড়ো পরেই অফিস করলেন এবং মাথা কামিয়ে মায়ের কাজ করে ফের কাজে যোগ দিলেন।

মনে পড়ছে রাজীব গান্ধীর কথা। তখন তিনি পশ্চিমবঙ্গের সংযুক্ত মেদিনীপুরে। খবর এলো গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, অবস্থা সঙ্কটজনক। দ্রুত দিল্লি রওয়ানা হলেন। বারবার হট লাইনে শেষ খবর জানার চেষ্টা করে অবশেষে জানতে পারলেন মা ইন্দিরা আর নেই। অজিত পাঁজাকে নির্দেশ দিলেন যেন কোনও হাঙ্গামা না হয়। দিল্লি পৌছে চলে গেলেন হাসপাতালে। তখন পোস্ট মর্টেম চলছে। অন্যদিকে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ফোন আসছে তাঁর কাছে। তখন মোবাইল ছিল না কাজেই খানিকটা ইন্দিরার অফিস ঘরেই থাকতে হলো রাজীবকে।

অবশেষে রাষ্ট্রপতি জৈল সিংয়ের ফোন। তাড়াতাড়ি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হবে পুত্র রাজীবকে। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে রাত ১০টার মায়ের মৃতদেহ এক প্রান্তে রেখে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে হলো তাঁকে। পরদিন মায়ের পারলৌকি কাজ শেষ করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসলেন তিনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকটাই ছিলেন মাতৃ-নির্ভর। অনেক ভাইবোন থাকলেও মায়ের সঙ্গে তিনিই থাকতেন। একইসঙ্গে খাওয়া-শোয়া। কাজে বেরনোর আগে মাকে প্রণাম করতেন। সেই মা হঠাৎই অসুস্থ হয় পড়লে দ্রুত তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয়। মমতা তখন স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে মিটিং করছেন। মিটিং সেরে হাসপাতাল গেলেন। মাকে কিন্তু ফিরিয়ে আনতে পারেননি। শোকে মুহ্যমান হয়ে শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকেছিলেন। কেউই কাছে যেতে পারছিল না। অবশেষে কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে পরদিন অফিস কারণ কোনও এক প্রতিনিধি দল আসবে।

তারা এসে বুঝলেও না গত রাতে মমতার মা চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। এদের থেকে অনেক কঠিন মনের মানুষ নরেন্দ্র মোদী। নিজের প্রধানমন্ত্রী বাসভবনে কোনও আত্মীয়কে আশ্রয় দেননি কখনও। শতায়ু মা কিন্তু মোদীর অত্যন্ত দুর্বল স্থান। সময় পেলে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গুজরাতে নিজেদের বাড়িতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে লাঞ্চ বা রাতের খাবার  খেতেন। হীরাবেন, নরেন্দ্রকে খাওয়াতে ভালোবাসতেন। যা হোক কিছু খেয়েই ফিরতে হতো প্রধানমন্ত্রীকে। সম্প্রতি বড়ভাইয়ের পথ দুর্ঘটনা ঘটে। চিন্তিত মোদী খবর নিলেন মাত্র, যাওয়ার সময় কোথায়? মা অসুস্থ হয় হাসপাতালে ভর্তি, দেখতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার ভোররাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শতায়ু হীরাবেন। কলকাতায় আসার কথা মোদীর।

সেটা শুধু বাতিল হলো, ভোরেই পৌঁছলেন গান্ধীনগরে এবং মায়ের শেষকৃত্যের সমস্ত কাজ করলেন। এরপর কলকাতার বিভিন্ন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কাজ সারলেন। কেউ বুঝলোও না কতোটা যন্ত্রনা চেপে কাজ করলেন নরেন্দ্র মোদী। এটাই বাস্তব, সবাই পারে না,সম্ভব নয়।


Follow us on :