সরস্বতী দাস। তাঁর অজ্ঞতা ও অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ঠকিয়ে তাঁকে তাঁরই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল এক আত্মীয়। সেই তিনিই আজ পরিত্যক্ত এক অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে দিন গুজরান করছেন কোনওমতে। যেখানে মাতৃ দিবসের একটি দিনে ঘটা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের ঝড় ওঠে, সেখানে এইসব মায়েরা থাকেন খোলা আকাশের নিচে, একা।
আলিপুরদুয়ারের পূর্ব চেপানির খাপসাডাঙা এলাকায় সন্তানহীন এক মায়ের দিনযাপন এমনই কঠিন। দুই পুত্র ও স্বামীকে হারিয়ে নিজের জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আঙুলের ছাপ না ওঠায় মিলছে না রেশন এবং বার্ধক্যভাতা। এমনকি শৌচালয়ের অভাবে যত্রতত্ৰ শৌচকর্ম করতে হচ্ছে অশীতিপর বৃদ্ধাকে। জানা গেছে, দুই সন্তান জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু জন্মের কয়েকদিন পরেই মৃত্যু হয়েছে ওই সদ্যোজাত দুই ছেলের। এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে সেভাবে কোনও সাহায্য মেলেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ত্রিশ বছর আগে ওই বৃদ্ধার স্বামী মারা যাওয়ার পর পূর্ব চেপানীর খাপসাডাঙা বাজার সংলগ্ন এলাকায় কিছু জমি চাষ করে এবং গরু-ছাগল প্রতিপালন করে বৃদ্ধা দিন কাটাতেন। অভিযোগ, ওই বৃদ্ধার এক আত্মীয় কয়েক বছর আগে তাঁর অসুস্থতার সময় চিকিৎসা করানোর নাম করে বৃদ্ধাকে ভুল বুঝিয়ে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি আত্মসাৎ করে। শুধু তাই নয়, ওই বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দেয়। সেই সময় থেকেই বৃদ্ধা আশ্রয় নিয়েছেন পূর্ব চেপানীর খাপসাডাঙা বাজার সংলগ্ন ওই সরকারি পরিতক্ত ঘরে। ঘরের টিনের চাল ফুটো থাকায় বর্ষাকালে জল পড়ে, বিদ্যুৎ না থাকায় কেরোসিনের কুপির আলোই ভরসা। কেরোসিনের দাম বাড়ায় এখন সেই আলোও নিভে গেছে তার জীবন থেকে। বৃদ্ধাকে পাশের স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের খাবারের উপর ভরসা করে থাকতে হয়। বর্তমানে স্কুল বন্ধ থাকায় দুমুঠো চাল জোগাড় করে তাই ফুটিয়ে খেয়ে জীবন রক্ষা করতে হচ্ছে।
তবে আমাদের সংবাদ মাধ্যমে ওই বৃদ্ধার কথা শুনে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলা দাস সরকার বলেন," আমি খুব তাড়াতাড়ি ওই বৃদ্ধা সরস্বতী দাসের খোঁজ নিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াবো এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"