নেই দুটি হাতই। তবে সম্বল বলতে আছে পা। আর তা দিয়েই বাজিমাত এক শিক্ষকের, যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ স্থানীয়দের। পা দিয়েই বোর্ডে লিখে বাচ্চাদের ভবিষ্যত গড়ছেন জগন্নাথ। তাঁর লড়াইয়ে মুগ্ধ গ্রামবাসীরাও। তবুও রথের দিনে মন খারাপ হয়ে উঠে জগন্নাথের। আক্ষেপ, ইচ্ছা থাকলেও রথে রশি টানতে পারেন না তিনি।
আজ শুভ রথযাত্রা। রথের রশিতে টান পড়ার সঙ্গেই এক অন্য জগন্নাথের কাহিনীতে মুগ্ধ পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম। তাঁর নাম জগন্নাথ বাউরি। দুই হাত নেই, শুধুমাত্র দু-পায়ের জোরেই তৈরি করেছেন হাজারো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। সঙ্গে নিজেরও ভবিষ্যৎ। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ নং ব্লকের স্থানীয় বেলুটি গ্রামে এক গরিব পরিবারে জগন্নাথ বাউরির জন্ম। জন্ম থেকেই দুটো হাত নেই তাঁর। পায়ে লেখা অনুশীলন করে পরীক্ষা দিয়ে আজ একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তিনি।
প্রথম প্রথম স্থানীয় গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের মনে সংশয় ছিল, দু-হাত ছাড়া তিনি কীভাবে স্কুলের ক্লাস নেবেন! তাঁদের বাচ্চাদেরই বা কীভাবে লেখাপড়া শেখাবেন! তাই অভিভাবকরা স্কুলের জানালা দিয়ে নজর রাখতেন তাঁর উপর। কিন্তু তাঁর ক্লাস নেওয়া দেখে সমস্ত সংশয় কেটে যায় অভিভাবকদের। দু-হাত ছাড়াই স্কুলে পড়াচ্ছেন জগন্নাথ।
জগন্নাথবাবু এখন জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর বাবা লক্ষণচন্দ্র বাউরি ও মা সুমিত্রা বাউরি দিনমজুরির কাজ করতেন। জগন্নাথ চাকরি পাওয়ার পর তাঁদের আর মজুরির কাজ করতে দেন না তিনি। জগন্নাথের দুই সন্তান, মেয়ে ঋত্বিকা ও ছেলে অষ্টম। জগন্নাথবাবু জানান, হাত না থাকলেও, পায়ে পেন-পেন্সিল ধরে লেখালেখি শুরু করেন তিনি। এভাবেই উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি টপকে ২০১০ সালে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের চাকরি পান তিনি। পায়েই এখন চক-ডাস্টার ধরে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ দেন। তবে এতে তাঁর অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। তাঁর কাছে এটা একটা লড়াই। ছোটবেলার প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ পালের অবদান সবটাই। তিনিই তাঁকে পায়ে পেন্সিল ধরে লিখতে শিখিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, "আমি ছেলেমেয়েদের এই শিক্ষাই দিই যে, সদিচ্ছা ও অধ্যাবসায় থাকলে একজন মানুষ সব পারেন। অসাধ্য বলে কিছুই নেই।"