২০ এপ্রিল, ২০২৪

Kapalkundala: কাব্যময়তার রহস্যে কপালকুন্ডলা ও লেখক (শেষ পর্ব)
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2022-11-02 20:40:41   Share:   

সৌমেন সুর: কপালকুন্ডলা ভালবাসার মানুষকে আগলে রাখতে চায়। তাঁর একমাত্র প্রিয় মানুষটি হলেন নবকুমার। এই নবকুমার আজকাল কেমন যেন বদলে গেছে। কোনও বিবাহিত নারীকে তাঁর স্বামী যদি অযথা সন্দেহ করে, তাহলে বিবাহিত নারীর পরিস্থিতি কেমন হয়, পাঠক আপনারা সেটা অনায়াসে অনুভব করতে পারছেন। কপালকুন্ডলার জীবনে এই অভিশপ্ত মুহূর্ত চলে আসে। কারণ সাংসারিক জীবনে তাঁরা সুখী নয় অযথা সন্দেহের কারণে। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তুলে ধরলেন কপালকুন্ডলা নারী চরিত্রের চিরন্তন ত্যাগের প্রতিমূর্তি।

একদিন নবকুমার দেখে, রাত্রি দুই প্রহরে কপালকুন্ডলা একাকিনী হেঁটে চলেছে। কোথায় যাচ্ছো কপালকুন্ডলা। নবকুমারের মনে সন্দেহের বীজ বপন হতে থাকে। নবকুমারের সন্দেহের আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার জন্য এই সময় কাপালিকের আগমন হয়। সে নবকুমারকে তিক্ত করে তোলে, ভুল বোঝায়। কপালকুন্ডলার দিকে তাকিয়ে বলে সে ব্যাভিচারিণী। নইলে কোনও নারী এত রাতে বাইরে বেরোয়। এমন নারীর বেঁচে থাকার কোনও অর্থ নেই। তাকে বলি দেওয়ার প্রয়োজন আছে।

বলির সময় উপস্থিত। কাপালিক নবকুমারকে মদিরার নেশায় জর্জরিত করে দিয়েছে। বলির আগে স্নান করাতে হয় বলে নবকুমার কপালকুন্ডলাকে নদীর কাছে নিয়ে আসে। এই সময় নবকুমার তার পায়ে আছড়ে পড়ে বলে, 'বলো বলো তুমি অবিশ্বাসিনী নও। একবার বলো। তাহলে আমি তোমাকে ঘরে নিয়ে যাই।' কপালকুন্ডলা এক বুক অভিমান করে বলে, 'আপনি যাকে আমার সাথে গভীর রাতে দেখেছিলেন সে হলো পদ্মাবতী।'

নবকুমারের ভুল ভাঙে, কপাল কুন্ডলার জন্য দু'হাত প্রসারিত করে। ঠিক এই সময় সাহিত্য সম্রাট বর্ণনায় নারী চরিত্রকে তুলে ধরলেন এক অভিমানী রূপে। যে স্বামী তাকে সন্দেহ করে, যার সঙ্গে মনের কোনও সম্পর্ক নেই, তার সঙ্গে থাকার কোনও অর্থ হয় না। জীবন বিসর্জন দেওয়া এর থেকে অনেক ভালো। কপালকুন্ডলা নদীর উত্তলিত তরঙ্গে ঝাঁপ দিলেন। নবকুমারও পরজীবনের ভালবাসার খোঁজে তলিয়ে গেলেন।

নারীরূপের রহস্যের সঙ্গে বিশ্বপ্রকৃতির বহিঃপ্রকৃতি এবং অন্তঃপ্রকৃতির গভীর রহস্যময়তা ঘিরে রয়েছে এই উপন্যাসে। কাব্যময়তা কপালকুন্ডলাকে এনে দিয়েছে স্নিগ্ধতর ভিন্ন এক সুষমা। এই উপন্যাসের সর্বাঙ্গে রয়েছে গর্জমান জলতরঙ্গের সুর এবং সেই অরণ্যের রহস্যঘন তন্ময়তা। যার ফলে গল্পটি আমাদের আকর্ষণ করে।


Follow us on :