ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা যা, তাতে পকেটের পয়সা খরচ করে বাজার করে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া ভুলেছে এদেশের বাঙালি। এই বঙ্গসমাজ কিন্তু বিখ্যাত খাদ্যরসিক হিসাবে। আজকাল চাল, ডাল, তেল, নুন থেকে মাছ-মাংস, তরিতরকারির যা দাম হয়েছে, তাতে খাওয়া নিয়ে বিলাসিতার কথা কেউ ভাবতেই পারে না। সারা দেশে একই অবস্থা। দিল্লি, মুম্বই বা বেঙ্গালুরুর চাকরিজীবীরা পারতপক্ষে রবিবার বাড়িতে রান্নাবান্না করার ব্যাপারে ঘোর আপত্তি প্রকাশ করেছে চিরকাল। তারা লাঞ্চ বা ডিনারে পরিবার নিয়ে নিজের পকেটের কথা ভেবে বাইরেই খেয়ে থাকে। রবিবার বাঙালিরা যে রেস্টুরেন্টে খায় না, এমন নয়। কিন্তু প্রধানত বাড়ির খাবার খেতেই ভালোবাসে তারা, সে যাই হোক না কেন।
৫০-৬০ দশক থেকে ৯০ দশক অবধি বাঙালিবাড়ির রবিবার মানেই একটা জমজমাট দিন। সারা সপ্তাহ কাজের পর ওই একটা ছুটির দিন নিজের মতো করে কাটাতে চায় পেশায় যুক্ত মানুষ। তখনকার দিনে বাড়িতে কাজের পরিচারিকা থাকত। রান্নাবান্না, ফাইফরমাশ খাটার কাজের লোক। কাজের বা রান্নার লোক থাকলেও গিন্নিবান্নিরা নিজেরাই রান্নাঘরে সকাল থেকে দুপুর কাটাতেন, মানে খাওয়া শেষ অবধি।
সেই সময়কে আদিযুগ নিশ্চই বলা যাবে না। কিন্তু আগেকার দিনে বলা যেতেই পারে, সকালে বাবুরা একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠতে চাইলেও গিন্নিরা ঠেলে তাদের বাজারে পাঠাত। বাজার হয়ে গেলে সকালের প্রাতঃরাশ। ঘিয়ে ভাজা লুচি, সাদা আলুর তরকারি, বাজার থেকে আনা গরম জিলিপি পাতে থাকবেই। এরপর একটু ঘরের টুকিটাকি কাজ করতে করতে বেলা বাড়তেই স্নান সেরে জমাট খাওয়াদাওয়া। ডাল, তরকারির সঙ্গে খাসির মাংস মাস্ট। শেষ পাতে চাটনি, দই। আজ খাসির মাংস কেনার ক্ষমতা কজনের আছে? দাম চড়েছে ৭৫০ টাকা কেজি, খাবে কী? এরপর দুপুরে তখনকার দিনে লম্বা ঘুম। বিকেলে হয় তেলেভাজা অথবা সিঙ্গারা-চা। এরপর অনাবিল আড্ডা। তখন তো আর টিভির গল্প ছিল না বা সোশ্যাল নেট। রাতে রুটি, একটু কষা ডিমের ঝোল বা সকালের অবশিষ্ট মাংস। দিব্যি কেটে যেত রবিবারটা।