২৯ মার্চ, ২০২৪

Lalon: লালনের চোখে 'মনের মানুষ' (প্রথম পর্ব)
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-03-30 10:34:53   Share:   

সৌমেন সুর: গৌড়ীয় বৈষ্ণবমত, সুফী মার্গ এবং সহজিয়া পথ--এই তিন ধারাতেই লালনের অভিষেক ছিল বলেই তাঁকে কোন একটি ধারায় চিহ্নিত করা যায় না। লালন ছিলেন একজন উচ্চাঙ্গের সাধক। তাঁর সম্বন্ধে বলা হয়, 'আউল বাউল দরবেশ সাঁই/ লালন সাঁইয়ের উপরে আর নাই।' লালনের গানে আমরা পাই- 'সব লোকে কয়, লালন কি জাত সংসারে/ লালন বলে, জাতের কিরুপ, দেখলাম না এই নজরে...।' বাউলের কাছে দেহভান্ডই হলো ব্রক্ষ্মান্ড। এই দেহ মন্দিরেই তাদের মনের মানুষ। জড় দেহের মধ্যে কীভাবে চিদানন্দময় অনন্তের স্বাদ পাওয়া যায়, বাউলরা তারই সন্ধান করেন। এই অধরা মনের মানুষকেই তাঁদের দেবতা জ্ঞান করেন, যিনি কোনও মন্দিরে বা মসজিদে থাকেন না, বাউলদের বানীই হলো- 'এই মানুষে আছে সেই মানুষ।' কিন্তু লালনের জীবনে 'এই মানুষে সেই মানুষের দর্শন লাভ অর্থাৎ অন্বেষন সম্পূর্ন হয়নি। তাঁর আত্মা অপরিতৃপ্ত।'

বাউলরা বেদ মানে না, কোরান মানে না, মন্দির মসজিদ মানে না, পূজা-পার্বন মানে না, রোজা নামাজ মানে না। দেবদেবী, অবতার, পয়গম্বর মানে না। এমনকি ঈশ্বর, আল্লাকেও ডাকে না। তাই বলে বাউলরা নিরশ্বরবাদী নয়। তাদের যিনি সাঁই তিনি অলখ মানুষ। সকলের অন্তরেই তিনি রয়েছেন। অন্তরেই তাঁকে পাওয়া যায়। লালন একেই মনের মানুষ বলেছেন।

মরমীয়া সাধক কবি হাসন রাজারও একই রকম উপলব্ধি হয়েছিল। একটা কিছু তাঁর সামনে ছিল, যা তিনি ধরেও ধরতে পারতেন না, তাকেই হাসন রাজা অন্তরিয়া বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধিও একই ছিল। আসলে সাঁই-দরবেশের 'অহং' বোধ থাকে না। তারা ঈশ্বরের অচিন্তনীয় সত্ত্বার মধ্যে নিমজ্জিত হন। এই মিশে যাওয়ার পরিভাষা হলো 'ফানা'। 'ফানা' না হলে অটল প্রাপ্তি হয় না। আর প্রেমিক ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়াকে সামা বলে। এই মিলিত হওয়াকেই বাউলতত্ত্বে বলা হয় চাঁদের গায়ে চাঁদ লাগা- এটি সম্ভব নৃত্যগীতের মাধ্যমে।


Follow us on :