নদীয়ার শান্তিপুর শহরের গোপালপুরের বাসিন্দা স্বপন দাস। পুরনো এবং বাতিল ভাঙাচোরা সামগ্রী কুড়িয়ে জীবিকা অর্জন করতেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এবং দীর্ঘদিন লকডাউনের জেরে আয়-উপার্জন তলানিতে ঠেকেছিল তাঁর। বড় ছেলে গোপালের বয়স ১০ বছর। ছোট মেয়ের বয়স ৭। সংসারের বেহাল পরিস্থিতির কারণে একপ্রকার বাধ্য হয়েই পড়াশুনো বন্ধ করতে হয় গোপালকে। যদিও ছোট মেয়ে পড়াশোনা বহাল রেখেছে কোনওরকমে।
আশ্চর্যের বিষয়, আর্থিক অনটনের কারণে বিশেষভাবে সক্ষম ১০ বছরের গোপাল বাবার কাঁধের বস্তা নিজের কাঁধে তুলে নেয়। সংসার চালানোর তাগিদে ২০২১-এ চতুর্থ শ্রেণিতেই শেষ হয়েছিল পড়াশুনো। স্বপনবাবু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সরকারি ভাতাও পেতেন। তবে তাও ছিল কয়েক মাসের জন্য।
উল্লেখ্য, শান্তিপুরের এক সামাজিক সংস্থা মানসিক ভারসাম্যহীন ও আশ্রয়হীন ভবঘুরেদের প্রাত্যহিক খাবার পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় বিষয়টি খেয়াল করে। কথা বলে স্থানীয় তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রশান্ত বিশ্বাসের সঙ্গে। সেইমতো রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে। মঙ্গলবার এক বছর বাদে গোপালকে পুনরায় স্কুলমুখী করতে সহযোগিতা করল সকলে। যদিও ওই বিদ্যালয়ে শিশুশ্রমিকদের পড়াশোনার জন্য একটি ইউনিট চালু ছিল। এখন তা বন্ধ রয়েছে জেলাশাসকের নির্দেশে।
বেসরকারি সমাজসেবা সংস্থার পক্ষ থেকে রণপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, শুধু স্কুলে ভর্তি নয়, সংসারের আর্থিক ঘাটতি পূরণের জন্য ওই পরিবারকে আহারাদি দিয়ে সহযোগিতা করা হবে নিয়মিত।
স্থানীয় কাউন্সিলর প্রশান্ত বিশ্বাস এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এই কারণেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রয়োজন। ওয়ার্ডের নানান দায়িত্ব সামলানোর মাঝে অনেককিছুই তাঁদের জানা সম্ভব হয় না। গোপাল এবং তাঁর ছেলে দুজনেই যাতে সরকারি ভাতা পায়, তার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান তিনি।
প্রধান শিক্ষক শান্তিময় হালদার বলেন, স্কুলছুট অনেকেই স্কুলে ফেরাতে সফল হয়েছি আমরা। তবে গোপাল তাঁদের বাড়তি পাওনা। যেহেতু এক বছর পড়াশোনা বন্ধ ছিল এবং প্রায় চার মাস দেরিতে ভর্তি হল, তাই ওর জন্য বিশেষ নজর থাকবে আমাদের।
গোপাল বই, খাতা, জামা, জুতো, স্কুলব্যাগ পেয়ে বেজায় খুশি। গোপাল জানায়, এখন থেকে সে নিয়মিত স্কুলে আসবে। ভাঙাচোরা জিনিস কুড়াতে যাবে না কোনওদিন। সে পড়াশুনো করতে চায়।
এহেন মানবিক উদ্যোগে অত্যন্ত খুশি গোপালের বাবা স্বপন দাস। ছেলে আবারও পড়াশুনো করতে পারবে, তাতেই আনন্দিত তিনি।