রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা উঠে আসছে। ঠিক তখনই অন্য চিত্র ধরা পড়ল পূর্ব মেদিনীপুরের (East Medinipur) পাঁশকুড়ার চাঁপাডালি উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষকের বদলি (transfer) আটকাতে স্কুলের অফিসরুমের সামনে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাল ছাত্রছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষক যাতে অন্য স্কুলে বদলি না হন, সেই আর্জি জানিয়ে পায়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা গেল ছাত্রীদের। কারোর মুখে স্কুল ছেড়ে যেতে না দেওয়ার শ্লোগান, কেউবা হাত টেনে ধরে রেখেছেন।
আসল ঘটনাটি হল, উৎসশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে ওই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নরেশ রানা নিজের বাড়ির কাছের স্কুলে যাওয়ার আবেদন করেছিলেন। চাকরি জীবন প্রায় শেষের দিকে। অবসরের আগে কটা বছর কাছাকাছি চাকরি করতে চাইছিলেন। আর সেই আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছিল স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে।
কিন্তু চাঁপাডালি স্কুলের পড়ুয়ারা প্রধান শিক্ষকের ভালোবাসা, স্নেহ থেকে দূরে সরে থাকতে চাইছে না। আর সে কারণেই পড়ুয়ারা তাঁদের প্রিয় প্রধান শিক্ষকের অন্যত্র বদলি কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না। শুধু স্কুলের পড়ুয়ারাই নয়, অভিভাবকেরাও মেনে নিতে পারেননি বিষয়টি। আর সে কারণেই শনিবার পড়ুয়ারা স্কুলের সামনেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাদের দাবি, সকলের প্রিয় প্রধান শিক্ষককে স্কুলেই থাকতে হবে। স্কুল ছেড়ে যেতে দেবে না তারা।
পাঁশকুড়া পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁপাডালি হাইস্কুলে ২০১০ সাল থেকেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন নরেশ রানা। যদিও নরেশবাবুর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং-এর দশক গ্রাম এলাকায়। সে কারণেই তিনি নিজের এলাকার স্কুলে বদলি হয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের সঙ্গেই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন নরেশবাবু। স্কুলের শিক্ষা থেকে শুরু করে শিক্ষাকেন্দ্রের বিভিন্ন কার্যকলাপ মন কেড়েছে পড়ুয়াদের।
উৎসশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে বদলির আবেদন মঞ্জুর হয়। সেই মোতাবেক তিনি পাঁশকুড়ার চাঁপাডালি স্কুল ছেড়ে চলে যাবার প্রস্তুতি নেন। তখনই স্কুলের পড়ুয়ারা তাঁকে ঘিরে চলে যাওয়া আটকে দেয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে চলে যেতেই হবে, এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক নরেশবাবু। তবে নাছোড়বান্দা ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে বদলির বিষয়টি আরেকবার বিবেচনা করে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ছাত্রছাত্রীদের এমন আচরণে আপ্লুত প্রধান শিক্ষক। তিনিও ভেঙে পড়েন। এখন অপেক্ষার ছাত্র-ছাত্রীদের কাতর আবেদনে বদলি রোখা যায় কিনা।