রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে বলুন, কিংবা ইদানিংকালের জয় গোস্বামী। খাবারের বিবরণ থাকবেই। অর্থাৎ কবিতা হোক বা গদ্য, খাবারের কথা কোথাও না কোথাও থাকবেই। রবি ঠাকুরের লাঞ্চে তেঁতো থাকবেই, ওটি খেয়ে বাকি খাবারের মধ্যে হাত বাড়াতেন কবি। ঠাকুরবাড়ির রান্নায় একমাত্র মাংস ছাড়া অন্য কোনও আমিষ খাদ্যে পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবহার থাকত না। কিন্তু মাছের কালিয়ার স্বাদ ছিল অনবদ্য। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে তো ব্যোমকেশ হোক বা রাজারাজরার কাহিনী, খাদ্য বিবরণ থাকতই। ব্যোমকেশ ও তাঁর সহযোগী বাড়িতে থাকলেই নানান পদের খাওয়া থাকতই। সকালে জলখাবার ৮ টার মধ্যে, দুপুরের খাবার অবশ্যই ১২ টাতে। দেরি হলে মাথা গরম হত সত্যান্বেষীর। আবার বিকেলের জলখাবার ৫ টার মধ্যে চাই, রাত ৯ টায় ডিনার। এরকম তৎকালীন সাহিত্যিকদের গল্প বা উপন্যাসে খাবারের বিবরণ থাকতই।
৬০ এর দশকে যখন সমরেশ, সুনীল, শীর্ষেন্দু, সত্যজিৎরা দাপটে লিখতেন, তখন তাঁদের লেখনীতে খাবারের অংশ থাকতই। সুনীলের সাহিত্যে মদ্যপানের বিবরণ থাকলেও সেটাই বাঙালি হইহই করে গ্রহণ করত। সত্যজিৎ রায় খুবই খাদ্যরসিক ছিলেন। মাঝে মধ্যে তিনি বাইরে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেন। তিনি মদ্যপান করতেন না। তাঁর প্রিয় রেস্তোরাঁ ছিল স্কাইরুম এবং জন্মদিনে তিনি কেনিলওয়ার্থে খেতে যেতেন। তিনি সোনামুগের ডাল, কাতলা মাছ বা মাটন খেতে ভালোবাসতেন। মিষ্টির মধ্যে মিহিদানা বা নতুন গুড়ের সন্দেশ তাঁর প্রিয় ছিল। ফলে ফেলুদার প্রিয় খাদ্য তাই ছিল।
শোনা যায়, সৌরভ গাঙ্গুলির প্রিয় খাদ্য বিরিয়ানি ও ফুচকা। এই খাবার আমবাঙালির পছন্দ। কাজেই সৌরভও পছন্দের মানুষ। বাঙালি সর্বভুক। হেন খাবার নেই যা খাদ্য এবং বাঙালি খায় না। খাবারের বিষয়ে বাঙালি কাশ্মীর থেকে কন্যকুমারিকা অবধি সব রাজ্যের খাবার তৃপ্তি করে খায়। বিদেশেও বাঙালি অনায়াসেই বিদেশি খাদ্য গ্রহণ করে। তবে রাস্তার খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাঙালির সবচেয়ে বেশি। প্রয়াত সাহিত্যিক সুকুমার রায় মজা করে লিখেছিলেন, যতই খাবার থাক না কেন, সেরা পাউরুটি আর ঝোলা গুড়।