সহজ পাঠে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন "ছোট খোকা বলে অ আ, শেখেনি সে কথা কওয়া"। শুধু রবীন্দ্রনাথ কেন, বিদ্যাসাগরের 'বর্ণপরিচয়'-এ পর্যন্ত খুব সাদামাটা প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। দিন পাল্টানোর পর বাবা-মা ভাবলেন, ছেলে যখন তার খেলাধুলো করা উচিত এবং মেয়ে যখন তার নিদেনপক্ষে গান শেখা উচিত। তাও তো ভালোই ছিল ওই ৫০-৬০ বা ৭০ এর দশকে। কিন্তু দ্রুত দিন পাল্টালো। ৮০র মধ্যভাগে জ্যোতিবাবুদের সময় হঠাৎ ইংরেজি তুলে দেওয়া হল ছোট ক্লাসে। এতে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হল বাংলা মিডিয়াম বা সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। প্রবণতা এল মধ্যবিত্ত সমাজে যে বাংলা মিডিয়ামে পড়িয়ে কোনও লাভ নেই। ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলেমেয়েরা ভর্তি হল ইংরেজি মাধ্যমে।
সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে। আজকাল সামান্য আর্থিক সঙ্গতি থাকলেই বাচ্চাদের ভর্তি করা হচ্ছে ওই সব প্রাইভেট স্কুলে। এর পরোক্ষ ব্যবস্থা বামেরাই করে দিয়ে গিয়েছে।
দুটি বছর করোনা আবহ গিয়েছে। স্কুল বন্ধ। শিশুরা হাঁফিয়ে উঠেছিল বাড়িতে বসে। স্কুল নেই, বন্ধুবান্ধব নেই। সময় কেটেছে তাদের মা বা বাবার ফোনের ছবি বা সিনেমা বা সিরিয়াল দেখে। অবশেষে স্কুল খুলল। বর্তমানের টিচাররা বুঝতেই পারছেন না শিশুদের মানসিকতা। হয়তো বা ভাবছেন, অনেকদিন ক্লাস করেনি, কাজেই দু বছরের শিক্ষা প্রায় গিলিয়ে দিতে হবে। মারাত্মক। প্রবল চাপে যেমন বাচ্চারা, তেমনই চাপ অবিভাবকদের। ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ হারাচ্ছেন তাঁরা। মারধর খাচ্ছে বাচ্চারা। হোম টাস্ক শেষ করানোর জন্য খাওয়া, নাওয়া ভুলে বইয়ের পোকা বানানো হচ্ছে তাদের। স্কুলে গিয়ে টিচারদের যে স্নেহশীল হতে বলবেন, এমন স্পর্ধা কার আছে? এতে তার বাচ্চার উপর আরও চাপ বাড়তে পারে।
এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই কি? শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের মন বুঝবে কে?