রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের চোখে কাতার বিশ্বকাপ। 'অবিশ্বাস্য' জাপানের খেলা দেখে কী মতামত মন্ত্রীরমন্ত্রী (Bengal Minister) হিসাবে প্রচুর কাজ থাকে, নতুন পাওয়া দায়িত্বও অনেক। কিন্তু তাই বলে ফুটবল দেখবো না তাই কী হয় নাকি? সেই ১৯৭৮-এ ছেলেবেলা থেকে টিভিতে চোখ রাখতাম শুধু একটু নতুন খেলা দেখার জন্য। আমি ঘোরতর ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক ছিলাম, অবশ্য এখন নিরপেক্ষ থাকতেই হয়। লাল হলুদের খেলা থাকলে নৈহাটি থেকে যেভাবেই হোক ময়দান এবং অনেক পরে সল্টলেক যেতাম। ওই খেলাতেই সন্তুষ্টি ছিল আমাদের। কিন্তু নিয়মিত ভাবে বিদেশি খেলা দেখা এই বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) থেকেই। ৮২-র স্পেন বিশ্বকাপে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা (Brazil-Argentina) কিছু করতে পারল না। দেখেছিলাম জার্মানি আর ইতালির দুর্দান্ত ফাইনাল, সাদা-কালো টিভিতে। তখন অবশ্য ওটুকু যথেষ্ট ছিল। এরপর ৮৬-র মারাদোনার আর্জেন্টিনা থেকে হলুদ-সবুজ জার্সির ব্রাজিল বাঙালিকে টেনেছে। এক দল ব্রাজিল, তো অন্য দল আর্জেন্টিনা। যদিও তখন ধীরে ধীরে সমর্থন আদায় করছে ইতালি এবং জার্মানি।কিন্তু এশিয়ার দেশগুলির সম্বন্ধে আমাদের উৎসাহ ছিল অনেক কম। নেহেরু কাপে বিদেশি দলগুলি এসেছিলো ৮০-র গোড়ায়। কিন্তু তার মধ্যে চীন, কোরিয়া বা রাশিয়ার খেলা আমাদের ভালো লাগলেও ভক্তি যোগায়নি। ইস্টবেঙ্গল তো উত্তর কোরিয়ার একটি ক্লাবকে হারিয়েছিল। কিন্তু গত ৩৫-৩৬ বছর ধরে আমাদের বৈঠকখানায় বিদেশ দিব্বি ঢুকে গিয়েছে। ইউরোপিয়ান বা লাতিন আমেরিকান ক্লাব ফুটবল আমরা আজ দেখে অভ্যস্ত। জাপান নিয়ে ভাবিনি কখনও।এবারেও শত কাজ, সংগঠন, টিভি অনুষ্ঠান ইত্যাদির শেষে বিশ্বকাপে চোখ রেখেছি। কোনও খেলা ছাড়ছি না, ঘুম বলতে ওই দু-তিন ঘন্টা। বৃহস্পতিবার জাপানের খেলায় চোখ রেখেছিলাম। অন্যদিকে ভেবেছিলাম জার্মানি তো জিতবেই আর জাপান বোধহয় পারবে না। সবচেয়ে বড় কথা জাপানের প্রতিপক্ষ স্পেন, কাপ জেতার অন্যতম দাবিদার। কিন্তু এ কি দেখলাম! আমি চমৎকৃত, কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয় প্রশংসার। পাসিং বা তিকিতাকা ফুটবলকে দমিয়ে দিয়ে এক গোল খেয়েও ভয়ঙ্কর জাপানকে দেখলাম প্রেসিং ফুটবল খেলতে। আমাদের মহাদেশে চিন নিয়ে আমরা লাফাই, কিন্তু জাপান শিল্প সংস্কৃতি সভ্যতা এবং তাদের দেশের ফুটবলে তারা এতটাই এগিয়েছে যে আলোচনার কিছু নেই। দুই ফুটবল দৈত্যকে সূর্যোদয়ের দেশ হারালো শ্রেফ 'দৌড়ে'। আমাদের ফুটবলে কতটা আগের তুলনায় উন্নতি হয়েছে পরের কথা। কিন্তু জাপানকে দেখে ভারত কিন্তু জেদ বাড়াতেই পারে। জাপান আজ সারা এশিয়ার উদাহরণের সুধা। সেলাম জানাই জাপানকে এবং চাই বাকি খেলাগুলিতেও তারা যেন এই স্পিরিট ধরে রাখতে পারে। (অনুলিখন : প্রসূন গুপ্ত)
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)