তৃতীয় তৃণমূল সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে এবং পরিবর্তন সরকারের ১১ বছরপূর্তির আগের দিনই ফেসবুকে বিস্ফোরক পোস্ট করেন দলের যুব মুখ দেবাংশু ভট্টাচার্য। সেই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, 'গতবছর ঠিক আজকের দিন পর্যন্ত রাজ্যে যে তৃণমূলটা ছিল, সেটাই নিষ্কলুষ। ধান্দাবাজহীন, অকৃত্রিম, প্রকৃত তৃণমূল। তারপর তো বন্যা এল! গঙ্গার জল, ড্রেনের জল সব মিলেমিশে একাকার! তবুও দলে একটা স্ট্রং ফিল্টার আছে বলেই বিশ্বাস। তারা পিছনের সারিতেই থাকবেন, সেটাও বিশ্বাস করে দলের কর্মীরা।'
আর এই পোস্ট ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক এবং যার জেরে পোস্টটি মুছতে বাধ্য হয়েছেন দেবাংশু। এমনকি, পোস্ট মুছে দেওয়ার কারণও ফেসবুকে দর্শান তৃণমূলের এই তরুণ নেতা। তিনি লেখেন, 'শেষ পোষ্টের অর্থ হয়ত ঠিকঠাক বোঝাতে পারিনি। অকারণ বিতর্ক হচ্ছে। তাই পোস্ট ডিলিট করলাম। কর্মীরাই দলের সম্পদ। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। দলের সিদ্ধান্তের উপর ভরসা রাখতে হবে। এই দলে কর্মীদের স্বার্থ সবার আগে দেখা হয়। কারণ, এই দলের নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।'
এই প্রসঙ্গে একটি ফেসবুক লাইভ করেন তিনি। সেখানেই ভুল বোঝাবুঝির তত্ত্ব খাড়া করে একই বক্তব্য রাখেন দেবাংশু। কিন্তু দেবাংশু পোস্ট মুছলেও রাজ্য রাজনীতিতে মুছে যায়নি তাঁর এই পোস্ট ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক। একযোগে আক্রমণ করেছে বিজেপি এবং বাম।
বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, 'পোস্ট পড়ে আমার মনে হয়েছে, ও দলের ভুল-অন্যায় যুক্তি দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করে। এটা ওর নিজস্ব উপলব্ধি এবং দৃষ্টিভঙ্গি। খেয়াল করলে দেখা যাবে আজকের দিনের পর থেকে ভোট পরবর্তী হিংসা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি বলপূর্বক তৃণমূল ঝাণ্ডা ধরানোর একটা পদ্ধতি শুরু হয়। ২০২১-র পর রাজ্যে যা চলছে, সেসব দেখে তৃণমূলের অনেকে মুখ খুলছেন। কিছুদিন আগে সৌগত রায় বলেছেন। সহ্যের সীমার বাইরে যাওয়ায় দেবাংশু প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। ব্যক্তিগত যন্ত্রণার জায়গা থেকে হয়তো ও এই কথা বলেছে।'
এদিকে, বাম ছাত্র নেতা সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, 'দেবাংশু কী লিখেছে আমি জানি না। হয়তো ও এই দুঃখ থেকে লিখেছে যে ওকে পাড়িয়ে সব ঢুকে গিয়েছে। এই পোস্টে প্রমাণ হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস উল্কার মতো পতনের দিকে এগোচ্ছে।'
এই আক্রমণের পাল্টা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন জানান, আজ থেকে এক বছর আগে ২ মে বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা দেখিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরিয়েছে বাংলার মানুষ। ব্যর্থ হয়েছে বিজেপির সব ধরনের চক্রান্ত। বাংলার উন্নয়নের জন্য অনেক মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন।'