নিরলস সাহিত্য চর্চার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মানিত করেছে বাংলা অ্যাকাডেমি। অ্যাকাডেমির এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করে খোলা চিঠি লেখেন সাহিত্যিক রত্না রশীদ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯-এ পাওয়া অন্নদাশঙ্কর পুরস্কার ফিরিয়ে দিতে চেয়ে সরব হয়েছেন তিনি। আর তাঁর এই সিদ্ধান্তকে এবার খোলা চিঠির মাধ্যমে বিঁধলেন তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। বঙ্গ রাজনীতির এই তরুণ মুখ খোলা চিঠি লিখলেন রত্নাদেবীকে। আর সেই চিঠিতে দেবাংশু উল্লেখ করলেন, 'হাতে গরমে ফুটেজ, বোধহয় একেই বলে।'
ঠিক কী লিখেছেন দেবাংশু? তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ, 'রত্না রশিদ ব্যানার্জিকে খোলা চিঠি। সম্মাননীয়া রত্নাদেবী, আপনার ২০১৯ সালে অন্নদাশঙ্কর পুরষ্কার ফেরত দেওয়ার পোস্টটি দেখলাম। আপনার খোলা চিঠিও পড়লাম যেখানে আপনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিরলস সাহিত্য সাধনার জন্য বিশেষ বিভাগে বাংলা অ্যাকাডেমির পুরস্কার দেওয়াকে সত্যের অপলাপ বলে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন এবং আপনার সুপ্ত বিপ্লবী সত্ত্বা অকস্মাৎ জেগে উঠেছে। আপনি নিজের পুরস্কার ফেরত দেবেন। এই দাবি রেখে বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ডাইনোসরদের কাছে দিন তিনেকের ম্যাটিনি আইডল হয়ে উঠেছেন। হাতেগরম ফুটেজ, বোধহয় একেই বলে।'
'রত্নাদেবী,খুব ভুল না করলে আপনি গত বিধানসভা নির্বাচনে নো ভোট টু বিজেপির হয়ে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। মন্তব্যও করতেন। বিজেপি এলে আপনাদের অবস্থা কী হবে এই নিয়ে যারপরনাই আশঙ্কিত ছিলেন এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ সিপিএম আমলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন আপনি আর পারিবারিকভাবে সিপিএমটাও করতেন। তাই জানেন কোনও স্বৈরাচারী আর শোষক শক্তি যখন ক্ষমতা পায়, তখন বিরুদ্ধ কণ্ঠের অবস্থা ঠিক কী হয়। বর্ধমানে বাড়ি আপনার রত্নাদেবী। সাঁইবাড়ি গণহত্যাকেও নিশ্চিত খুব কাছ থেকেই দেখেছেন, তাই না? আপনার স্বামীও সিপিএম করতেন, অথচ দেখুন এই সরকার, এই মুখ্যমন্ত্রীর আমলেই বাংলা সাহিত্য অ্যাকাডেমি আপনাকে একটা আস্ত পুরস্কার দিল। সিপিএম আমলে সিপিএম না করে পুরস্কার, ভাবতে পারতেন রত্নাদেবী?'
'যাইহোক যাকে এই সামান্য পুরস্কার দেওয়া আপনার সত্যের অপলাপ মনে হয়েছে তার বই বেস্টসেলার আর আপনার বন্ধুবৃত্তের নব্বই ভাগ লোকই আপনার একটা বইয়ের নামও মনে করতে পারবেন না। যাকে নিয়ে আপনার আজ এতো সমস্যা, তিনি না থাকলে ২০২১-এ বিজেপিই আসতো, আপনি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে তিনদিনের ফুটেজ খাওয়ার সময় পেতেন না, ওরা কেড়ে নিতো। আপনার পুরষ্কার, আপনার সম্মান, আপনার জমি, আপনার বাড়ি, আপনার ঠিকানা, এনআরসি-র ধাক্কায় আসামের বাঙালিদের মতো সব শূন্য হয়ে হাতে ডিটেনশন ক্যাম্পের ছাউনির পেন্সিল পড়ে থাকতো রত্নাদেবী। আর সঙ্গে জুটতো বাংলাদেশী হবার তকমা। সেসব হয়নি, কার জন্য জানেন? যার প্রতি সযত্নলালিত ঘেন্না আজ প্রথম সুযোগেই আপনি উগড়ে দিলেন কী অবলীলায়। আপনারাই পারেন রত্নাদেবী, চোখের নিমেষে রঙ বদলাতে।
আপনার এই হঠকারী সিদ্ধান্তে পাওয়া দিনকয়েকের প্রচারের আলো আপনার ভবিষ্যৎ জীবনে কোনও আক্ষেপের কারণ যেন না হয় প্রার্থনা করি। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। অন্তত ছাপ ফেলা বা মনে রাখার মতো কিছু লিখুন যাতে পুরস্কার ফেরাবার বিতর্কের বাইরেও বাংলার মানুষ জানতে পারে, চিনতে পারে। ধন্যবাদান্তে, টিম "সত্যালাপ"।
লেখাটি "সত্যালাপ" গ্রুপের তরফ থেকে লেখা।'