দু'দিনের বঙ্গ সফরে শিলিগুড়িতে (Siliguri Visit) বৃহস্পতিবার জনসভা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। এদিন সভার শুরুতেই ভারত মাতা কি জয় স্লোগান তোলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, কলকাতায় মমতাদিদিও যেন আমার কথা শুনতে পান। এত জোরে বলুন, ভারত মাতার জয়। এদিন তিনি মঞ্চে উপস্থিত সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এবং জন বার্লা-সহ উত্তরবঙ্গের সকলকে প্রণাম জানিয়ে সভা শুরু করেন। তবে অমিত শাহের এই জনসভা প্রসঙ্গে কটাক্ষের সুর শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata) মমতার গলায়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, একুশের ভোটের প্রায় এক বছর পর বাংলায় পা রাখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'একবছর পর বাংলায় কেন, বলব। আজ উত্তরবঙ্গে এসে পঞ্চানন বর্মাকে প্রণাম করে বক্তব্য শুরু করি। আজ এখানে এসে উত্তরবঙ্গ-সহ বাংলার বাসিন্দাকে ধন্যবাদ। গত বছর ভোটে আপনারা বিজেপিকে ৩ থেকে ৭৭ করেছেন। ২ কোটি ২৮ লক্ষ ভোট দিয়ে গ্রামে গ্রামে দলকে মজবুত করেছেন। আপনাদের রায়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার ক্ষমতা এলেন৷ আমরা মেনেও নিলাম। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম উনি তৃতীয়বার শুধরে নেবেন। এক বছর অপেক্ষাও করলাম, দেখলাম উনি শুধরোয়নি। কাটমানি, সিন্ডিকেট, বিজেপি কর্মী খুন কোনওটাই বন্ধ নয়। ভাববেন না, আমরা লড়ব না৷ যতক্ষণ আপনি অত্যাচার, দুর্নীতি বজায় রাখবেন, আমরা লড়বই। পরিণাম অর্জন করেই ছাড়ব।'
তাঁর মন্তব্য,'গরিবের অধিকার লুট করবে আমরা চুপ থাকব? আমরা সোনার বাংলা স্বপ্ন নিয়ে বেরিয়েছি৷ ভোট পরবর্তী হিংসা দেখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে এখানে আইনের শাসন চলে না, শাসকের আইন চলে। দেশে কিছু হলে দিদি খুব তৃণমূলের প্রতিনিধি দল পাঠান। বীরভূমে ৮ জন মারা গেলেন, নদিয়ায় ধর্ষণ হল, দিদি প্রতিনিধি দল কই? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কই!'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ, 'বাংলার ঋণ দিন দিন বাড়ছে। তোলাবাজি, কাটমানি চলবে না। উত্তরবঙ্গের এইমস দক্ষিণবঙ্গে নিয়ে গেছেন৷ শিলিগুড়ি জলপাইগুড়িতে মেট্রো আসতে দেননি। দেশে বিদ্যুৎ, পেট্রোলের দাম সব থেকে বেশি কোথাও হলে এই বাংলায়। পেট্রোলে জিএসটি না করে রাজ্য কর বসিয়ে ১১৫ প্রতি লিটার করে রেখেছে। আয়ুষ্মান ভারতে ৫ লক্ষ মানুষ বঞ্চিত। সিএএ নিয়ে নিয়ে তৃণমূল মিথ্যাচার করছে৷ করোনা শেষ হলেই সিএএ হবে, আমি বলে গেলাম। অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে মমতা, শরণার্থীদের নাগরিকত্ব আমরা দেবই। কান খুলে শুনে নাও।'
তিনি জানান, এই সরকারের আমলে চা বাগানে জমির অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। রাজবংশী, গোর্খাদের ব্যাটেলিয়ন কই? মমতা দি উত্তর দেবেন? মোদিজি দেশে ৮০ কোটি রেশন দিয়েছেন ২ বছর ধরে। এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ছবি দিয়ে মিথ্যাচার করছেন। টিকা কে দিল? রেশন কে দিল? উত্তরবঙ্গে চার লেন কোরিডর, বাগডোগরা বিমানবন্দর ১৩০০ কোটি খরচে আধুনিককরণ হবে। গোরক্ষপুর-শিলিগুড়ি ৫৪২ কিমি রোড হবে৷ এগুলো কারা করছে? নিউ জলপাইগুড়ি ৩৫০ কোটি দিয়ে আধুনিক হচ্ছে। ৪৪০০ কিমি রেলওয়ে মোদিজি করছেন। দার্জিলিংয়ে পর্যটন নিয়ে আমরা কাজ করছি৷ গোর্খাদের হিতে কেউ কাজ করলে তা কেবল বিজেপি করেছে। সংবিধান থেকে সব সমস্যার সমাধান হবে৷ দিদি জিটিএ করে এই সমাধান হবে না। মমতার কাটমানি, তোলাবাজির বিরুদ্ধে আমরা বিজেপিই লড়ছি। তৃণমূলকে না উপড়ে ফেলে শান্তিতে বসব না। এক বছর সময় দিতেছিলাম। এক বছর পর বলিছি, জনতা আচ্ছা আচ্ছাদের সবক শিখিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দিলাম দিদি৷
এদিকে, অমিত শাহের বঙ্গ সফরকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, 'পাবলিকের পকেট থেকে যে টাকা কাটা হচ্ছে, সেটা কাটমানি নাকি ছোট মানি। ১৭ লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছে মোদী সরকার গেছে।' অমিত শাহের সিএএ কার্যকর প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন,'সিএএ মানে বুঝি চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। রোজ মিথ্যা কথা বলে, দুর্নীতি করে। বিজেপি সিপিএমের বিজেপির টিম। এরা ভাগ করে হিন্দু-মুসলমানে। সিএএ-র কথা বলে কোনও লাভ নেই। এখানে সবাই নাগরিক। না হলে ভোট দিল কী করে, প্রধানমন্ত্রী হলেন কী করে? অমিত শাহ ষড়যন্ত্রকারী তা বোঝাই যাচ্ছে। সিএএ নিয়ে ওদের পরিকল্পনা রয়েছে।'
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, 'ঘরে বসে ইডি-সিবিআই অপারেট করছে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।'