তাঁর একটি মন্তব্যে উত্তাল দেশ। আরব দেশগুলির তরফেও নিন্দার ঝড় ছুটে এসেছে। কাতার-বাংলাদেশের মতো দেশের বিভিন্ন অংশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতারির দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলের তরফে।
নূপুর শর্মা। এই নামটাই এখন সংবাদমাধ্যমে বহুল ব্যবহৃত। পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ তাঁর ছবিতে। কোথাও তাঁর বিরোধিতায় বিশৃঙ্খলা। আবার কোথাও চলছে সমর্থন। কিন্তু কে এই নূপুর শর্মা, যাঁকে নিয়ে এত চর্চা?
বিজেপির মুখপাত্র ছিলেন নূপুর শর্মা। তবে বিতর্কিত মন্তব্যের পর চলে গিয়েছে সেই পদ। দল করেছে বহিষ্কার। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময় নূপুর তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেন। সময়টা ২০০৮ সাল। হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আন্দোলনের ছাত্র শাখা 'অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের' (এবিভিপি) ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ। 'লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকস' থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনে স্নাতকোত্তর করার পর ২০১১ সালে ভারতে ফিরে আসেন নূপুর। সেই থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দ্রুত উত্থানের শুরু।
সুবক্তা নূপুর ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় সমানভাবে সাবলীল। দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর মতামতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিজেপির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মিডিয়া কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যান ২০১৩ সালে। দুই বছর পর নতুন নির্বাচনে আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিপক্ষে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন এই নূপুর। ভোটে কেজরিওয়ালকে হারাতে না পারলেও প্রচারে নূপুরের উদ্দীপনামূলক ভাষণ তাঁকে দলে আরও সামনের সারিতে নিয়ে আসে। দিল্লিতে দলের সরকারি মুখপাত্র নিযুক্ত হন। ২০২০ সালে নূপুর বনে যান বিজেপির ‘জাতীয় মুখপাত্র’।
গত কয়েক বছরে জাতীয় সংবাদ চ্যানেলগুলিতে দর্শকদের কাছে অতি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন নূপুর শর্মা। প্রায়ই সন্ধ্যায় টেলিভিশনে তাঁকে দেখা যেত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে। নূপুরের সমর্থকরা সম্প্রতি টুইটারে একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, এক আলোচককে তিনি বলছেন, ''আপনি একজন 'ব্লাডি হিপোক্রিট অ্যান্ড আ লায়ার' (ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী)। এরপর তিনি তাকে বলেন 'শাট আপ'।" ভিডিওটি শেয়ার হয় ব্যাপক। নূপুর যখন টুইটারে ওই ক্লিপটি শেয়ার করেন, টুইটার হ্যান্ডেলে তখন তাঁর পাঁচ লাখের বেশি ফলোয়ার ছিল। এই ফলোয়ারদের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এই ঘটনায় বিজেপির মধ্যে জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে নূপুরের। সমর্থকরা তাঁকে 'নারী সিংহ', 'নির্ভীক' ও 'একজন কঠিন লড়াকু' বলে আখ্যা দেয়।
তবে পয়গম্বরকে নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য তিনি করেছেন, তা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। নিন্দা চারিদিকে। যদিও দল থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি টুইটারে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। সেই টুইটার পোস্টে তিনি লেখেন, ''নিঃশর্তভাবে মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তবে ওই মন্তব্যের পেছনে যুক্তি ছিল। ওই অনুষ্ঠানে দেবতা শিবকে অনবরত যেভাবে অপমান আর অসম্মান করা হচ্ছিল, তার জবাব দিতে ওই মন্তব্য করেছিলাম।''