Share this link via
Or copy link
"দুবার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার কিংবা এবার পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়ায় আমার কোনও কৃতিত্ব নেই। ৪৫ বছর ধরে যে সমাজের কথা লিখে চলেছি আমার সেইসব সাঁওতাল মা ভাই বোনদের ভালবাসার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে"- পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্তির পর এই কথা জানালেন সাহিত্যিক কালিপদ সরেন।
সাহিত্য জগতে তাঁর পরিচয় খেরওয়াল সরেন নামে। নিজের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন ছোট থেকেই। তারই ফলস্বরূপ কালিপদ সরেন সাঁওতালি সাহিত্যে প্রথম পদ্মশ্রী সম্মান পেতে চলেছেন। তাঁর বাড়ি বর্তমানে ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুরে। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী। সাহিত্য চর্চার জন্য ৩৩ বছরের চাকরি জীবনেও পদোন্নতি নেননি। ২০০৭ সালে চায়না নাটকের জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। ২০১৯ সালের সাঁওতালিতে সেরা অনুবাদ কাজের জন্য দ্বিতীয়বারের জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান।
দিব্যেন্দু পালিতের উপন্যাস "অনুভব" সাঁওতালিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি। কালিপদ সরেনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৯ ই ডিসেম্বর লালগড়ের বেলাটিকরী অঞ্চলের রঘুনাথপুর গ্রামে। ওই গ্রামে কোনও স্কুল ছিল না। বেশ কিছুটা পথ হেঁটে গোপালপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হতো। প্রাথমিক পাঠ শেষ করে মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। এরপর ১৯৭৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। এরপর জামবনি ব্লকের কাপগাড়ি সেবাভারতি মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক পড়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি লিখেছেন যাত্রাপালা "নিধানদসা"। কলেজ জীবনে লিখেছেন গল্প, কবিতা, একাঙ্ক নাটক, প্রবন্ধ। বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। গল্প, কবিতা, নাটক, যাত্রা মিলিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩ টি। তাঁর গাওয়া ৪০ টি গানের ৪ টি অডিও সিডি প্রকাশিত হয়েছে। একটি আদিবাসী যাত্রাদলও রয়েছে। ২০১৫ সালের ঝাড়খন্ড রাজ্যে একটি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন।
প্রথমদিকে বাংলা হরফে সাঁওতালি লিখলেও পরে অলচিকি লিপিতে লেখা শুরু করেন। ২০০৪ সালে অল ইন্ডিয়া সান্তালি রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনে তাঁকে পণ্ডিত "রঘুনাথ মুর্মূ পুরস্কার" এ পুরস্কৃত হন তিনি। ২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল সান্তাল কাউন্সিল থেকে পেয়েছেন সেরা সাহিত্যিকের সম্মান। সাঁওতালি সাহিত্য জগতে একের পর এক পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়ার পর এবার "পদ্মশ্রী" সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ঝাড়গ্রামের প্রথম পদ্মশ্রী প্রাপক সাহিত্যিক কালিপদ সরেন।