ভারতবর্ষের একমাত্র রাজ্য গোয়া, যেখানে ঠিক ভারতীয় সংস্কৃতি খুবই কম। গোয়া অধিবাসীদের ভারতীয় হতে সমস্যা একটাই ছিল যে, ওই রাজ্য একটা দেশ ছিল ১৯৬১ অবধি। প্রায় ৪৫০ বছর আগে এই রাজ্যের রাজত্ব করা সুলতান ইউসুফ আদিল শাহকে পরাজিত করে ভাস্কো দা গামার অনুচররা এই রাজ্য দখল করে। শোনা যায়, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল ওই সময় এবং বহু মানুষের প্রাণ যায়। শেষ পর্যন্ত পর্তুগালের পতাকা ওঠে গোয়াতে। ক্ষমতায় আসে পর্তুগিজরা। এই ইতিহাস অনেকটা ভারতে ব্রিটিশের আবির্ভাবের মতো।
কিন্তু ব্রিটিশরা অনেক পরে ভারত দখল করে। ভারতের মতো ওই সময় ব্রিটিশরা অনেক দেশ দখল করলেও গোয়াতে হাত দেয়নি। কারণ, ইউরোপ মহাদেশে কোনও দেশ অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতো না। ব্রিটিশরা এ দেশে আসার পর কিছু মানুষ খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেও সাহেবরা জোর করে ধর্ম বিভাজন করেনি। করার দরকারও হয়নি। কারণ, হিন্দু-মুসলিমের দেশে এই ধর্মের বিভাজনেই খুশি ছিল ব্রিটিশরা।
গোয়াতে কিন্তু বিষয়টি ভিন্ন ছিল। পর্তুগিজরা এত অত্যাচার করত যে, প্রচুর মানুষ সেখানে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে এবং পর্তুগিজ ভাষা শিখে প্রশাসনকে খুশি রেখেছিল। আজও গোয়াতে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ৪০ শতাংশ।
গোয়ার নিজের ভাষা ছিল কোঙ্কনি, যা অনেকটাই মারাঠির মতো। গোয়াতে মারাঠি বংশোদ্ভূত কোঙ্কনির সংখ্যাই বেশি। পর্তুগিজদের হাত থেকে গোয়াকে উদ্ধার করা হয় ১৯৬১ তে। ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় তারা। এই রাজ্যের আয়তন উত্তর চব্বিশ পরগনার থেকেও ছোট। এদের জীবনযাত্রাও ভিন্ন, অনেকটাই ইউরোপিয়ানদের মতো। এদের রোজগারের মূল উৎস ট্যুরিজম। কিছু শিল্পাঞ্চল রয়েছে, কিন্তু কৃষির ক্ষেত্রে খুব বেশি এগিয়ে নেই গোয়া। ফলে করোনা আবহে খুব ক্ষতি হয়েছে এই রাজ্যের অর্থনীতির। এরা হইচই করতে ভালোবাসে। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবযাত্রা নয় এদের খুব বেশি। মূল খাদ্য অবশ্যই ভাত, সঙ্গে চিংড়ি মাছের অদ্ভুত স্বাদের ঝোল, সামুদ্রিক মাছের ঝোল, শুকরের মাংস এবং মদ্যপান। এদের নিজেদের তৈরি এক ধরনের দেশি মদ আছে 'ফেনী', যা কাজুবাদাম থেকে তৈরি এবং কাজুর চাষ এখানে বেশি। এদের নিজস্ব ঢঙের নাচগান আছে যা বিভিন্ন সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে এবং সংগীত যন্ত্রাংশও ভিন্ন। এখানকার আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। খুব গরম পড়ে এপ্রিল-মেতে। তখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি এবং জুলাই থেকে অক্টোবরে বৃষ্টির কারণে তাপমান ২৭ থেকে ২৯ ডিগ্রি। সর্বনিম্ন ১৯ ডিগ্রি একমাত্র জানুয়ারিতে।
এদের জীবনযাত্রায় আর যাই থাক, রাজনীতি নিয়ে বিন্দুমাত্র উৎসাহী নয় এরা। কাজেই এই রাজ্য নতুন দল "এলাম আর দখল করলাম" করা সম্ভব নয় বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।