পেশাটাই ছিল তাঁর কাছে নেশার মতো। পেশার কারণে ঝুঁকির মুখোমুখি হতে কোনওভাবেই পিছপা হতেন না তিনি। টালমাটাল পরিস্থিতিতেও শিরদাঁড়া সোজা রেখে নিজের কাজটা করে গিয়েছেন তিনি। অন্যায়ের সঙ্গে কোনও আপস নয়। যেখানেই অন্যায়ের আঁচ পেয়েছেন, তা তুলে ধরেছেন নির্ভীকভাবে। তিনি যে সাংবাদিক। আর সেই কারণে সব তথ্য তুলে ধরাই ছিল তাঁর কাজ। আর সেই খবর করতে গিয়েই প্রাণ গিয়েছিল আল-জাজিরার প্যালেস্টিনীয় সাংবাদিক শিরিন আবু আকলের। প্যালেস্টাইনের ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে খবর সংগ্রহ করছিলেন তিনি। সেই সময় ইজরায়েলের সামরিক অভিযানে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মহিলা সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। শিরিনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে প্রায় সব দেশই। কিছুদিন আগেই প্রয়াত সাংবাদিক শিরিনের শবযাত্রায় অংশ নিয়েছিল বহু মানুষ। সেই শবযাত্রার উপরও ইজরায়েলি পুলিস লাঠিচার্জ করেছিল বলে জানা গিয়েছিল। যাঁরা শিরিনের দেহবন্দি কফিনটি বহন করছিলেন, তাঁদেরও ধাক্কা দেওয়া হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র এই ঘটনা দুঃখজনক বলে জানিয়েছিলেন।
তবে এত অত্যাচারের পর থেকেও মানুষের মন থেকে মুছে যাননি শিরিন আবু আকলে। সাহসিকতার উপর ভর করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছেন তিনি। প্যালেস্টাইনের মানুষ প্রয়াত সাংবাদিককে সযত্নে, শ্রদ্ধাভরে শিরিনের স্মৃতি আগলে রাখছেন। প্যালেস্টাইনের শহর গাজার এক চিত্রশিল্পী আহমেদ আল শহর রং-তুলির মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানালেন প্রয়াত সাংবাদিক শিরিনকে। শহরের রাস্তায় প্রয়াত সাংবাদিকদের ছবি এঁকে এক অভিনব উপায়ে তাঁর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। কুশলী হাতের ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে সেই ম্যুরাল। শিল্পীর কথায়, ''শিরিন হলেন প্যালেস্টিনীয়দের কাছে এক শহিদ। তাঁর আত্মা শান্তি পাক।''
তবে শুধু গাজার রাস্তাতেই নয়, আবু আকলে ম্যুরাল ফুঁটে উঠছে নাজারেথের দেওয়ালেও। সেখানে জবর আব্বাস নামে এক শিল্পী শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছেন তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে। এই ছবিগুলি শুধুই শিল্পকর্ম নয়, এই ছবিগুলি মানুষের আবেগ।