ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন পড়ুয়ারা। চেয়ে রয়েছেন উদ্ধারকারী দলের দিকে। কানে বাজছে সাইরেনের আওয়াজ। গোলার শব্দ। চোখের সামনেই নিমেষে ভেঙে পড়ছে বহুতল। এই পরিস্থিতিতে দেশে ফিরতেই মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া বা কাজের সূত্রে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকরা। আর তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করতেই কেন্দ্রীয় সরকার 'অপারেশন গঙ্গা' কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। প্রতিদিন উদ্ধার করে এনেছিল শয়ে শয়ে পড়ুয়াদের। আরে সেই উদ্ধারকাজে সামিল হয়েছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলটরাও। তাঁদেরই একজন শিবানী কালরা। তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন।
সম্প্রতি বাঙালি বিমানচালক মহাশ্বেতা চক্রবর্তী একটি বেসরকারি সংস্থার বিমানচালক হয়ে অপারেশন গঙ্গায় সামিল হয়েছিলেন। ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন শুধুমাত্র কফি এবং বিস্কুট খেয়ে। আর ক্যাপ্টেন শিবানী চলতি মাসের গোড়ার দিকে ইউক্রেন থেকে ভারতীয় পড়ুয়াদের উদ্ধার করে ভারতে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
সেই অভিজ্ঞতাই নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছিলেন শিবানী। তাঁর কাছে ফোন আসার সঙ্গে সঙ্গে কোনওকিছু না ভেবেই হ্যাঁ বলে দিয়েছিলেন। কয়েকদিন পরই তাঁর ভাইয়ের বিয়ে। বাড়িতে চলছে জোরকদমে তার প্রস্তুতি। কিন্তু দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ ছাড়তে রাজি নন তিনি। ইউক্রেনে আটকে থাকা পড়ুয়াদের কথা ভেবেই রওনা দেন। বাড়ি থেকে বেরনোর আগে তাঁর মা তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলেন। হয়ত যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর বলেই চিন্তা হচ্ছিল তাঁর মায়ের।
বুখারেস্টে উদ্ধারকারী দলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। তাঁদের দেখে তাঁদের সকলের ভয়ার্ত মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপের পর তাঁদের নিরাপদে দেশে ফেরাবেন বলেও আশ্বস্ত করেছিলেন। প্রায় আড়াইশো পড়ুয়াকে নিরাপদে দিল্লিতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। আর দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করতেই সকলেই হাততালি দিয়ে উঠেছিলেন। আর তার মধ্যে থেকে তাঁর মা-বাবার গলায় সবার আগে শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি গর্বিত। গর্বিত তাঁর মা-বাবাও।
যুদ্ধের ২০ তম দিনে এসে কোনদিকে এগোয় যুদ্ধ পরিস্থিতি, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।