জীবন তো একটাই। সেই এক জীবনেই করতে হয় স্বপ্নপূরণ। আর সেই স্বপ্নপূরণের লড়াইয়ে এবার সফল প্রীতি হুডা। সোচ্চারে সে জানাল, ‘আমি এখন আইএএস অফিসার’, আর সেই মেয়ের ফোন পেয়ে স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে কেঁদে ফেললেন বাসচালক বাবা।
অভাব যাঁদের নিত্যদিনের সঙ্গী। সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করার। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে বাসচালক বাবা ভাবতেন, কীভাবে সংসারের খরচ জোগাবেন। তাই মেয়েকে পড়ানোর ইচ্ছে থাকলেও প্রীতির বাবা-মা ভেবেছিলেন, মেয়ের স্কুলের পাঠ চুকলেই বিয়ে দিয়ে দেবেন। কিন্তু প্রীতির মনে যে অন্য সংকল্প। তাকে তো বড় হতেই হবে। দাঁড়াতে হবে নিজের পায়ে। এরপরই শুরু হল প্রীতির লড়াই। প্রীতিদের আদি বাড়ি হরিয়ানার বাহাদুরগড়ে। বাবা দিল্লি ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (ডিটিসি)-এ কাজ করতেন। সেই সূত্রে তিনিও থাকতেন দিল্লিতে।
কেমন ছিল সেদিনগুলি? ছোটবেলা থেকেই আইএএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু বাবা যে ভাবছেন স্কুলের গণ্ডী শেষ হলেই বিয়ে দিয়ে দেবেন! স্বপ্নের কী হবে? তবে শুধু স্বপ্ন দেখে ক্ষান্ত ছিল না প্রীতি। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে স্বপ্নকে সাকার করতে লেখাপড়ায় আরও মন দিল।
লেখাপড়া করতে ভালো লাগত তার। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৭৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছি। বিয়ের হাত থেকে বাঁচতে এরপরই বারো ক্লাসে করলেন আরও ভালো ফল। ৮৭ শতাংশ নম্বর পেল প্রীতি। এবার নিশ্চিন্ত। পরের লক্ষ্য কলেজ। জানেন অর্থকষ্ট আছে, তবুও লক্ষ্যে যে অবিচল প্রীতি। তবে এবার কিন্তু মেয়েকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বললেন বাবাও।
এরপরেই দিল্লির লক্ষ্মীবাঈ কলেজে ভর্তি হলেন প্রীতি। বিষয় ছিল হিন্দি। স্নাতক পরীক্ষার ফল হল দ্বাদশের চেয়েও ভালো। স্নাতকোত্তর শেষ করে জেএনইউ-তে পিএইচডি-র পাশাপাশি চলত ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি।
তবে প্রথমবার ইউপিএসসি পাশ করতে না পেরেও হাল ছাড়েননি তিনি। দ্বিতীয় বারে মিলল তাঁর কাঙ্খিত সাফল্য। ২০১৭ সালের ইউপিএসসি-তে প্রীতির সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক হল ২৮৮। সংবাদসংস্থাকে প্রীতি নিজেই জানালেন, "ইউপিএসসি-র রেজাল্ট দেখে বাবাকে ফোন করেছিলাম। বাবা তখন বাস চালাচ্ছেন। ফোনে বললাম, ‘বাবা, আমি এখন আইএএস অফিসার’। কিছুক্ষণ চুপ। তারপর ফোনের ওপার থেকে কেঁদে ফেললেন বাবা।"