মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকটের এতদিন পর সক্রিয় দেখা গেল বিজেপিকে। এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন অবশেষে অন্তিম পর্যায়ে যেতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার বসছে বিধানসভা। সেদিন বিকেল পাঁচটায় বিধানসভায় আস্থা ভোট নিতে হবে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে। বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মঙ্গলবার রাতে রাজভবনে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশিয়ারির সঙ্গে সাক্ষাৎ-এর সময় আস্থা ভোটের আরজি জানান। সেই মতোই বিধানসভার সচিবকে চিঠি লিখে বৃহস্পতিবার বিশেষ অধিবেশন ডেকে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে আস্থা ভোটের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল।
উল্লেখ্য, বিজেপি নেতা রাজ্যপালকে জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। এবং একটি ফ্লোর টেস্ট চলছে। রাজ্যপাল এখনও এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি।
রাজ্যপালের সঙ্গে ফড়নবিশ-এর বৈঠকের ১০টি উল্লেখযোগ্য দিক হল-
১. বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশ রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বলেছিলেন, শিবসেনার ৩৯ জন বিধায়ক বারবার বলেছেন তাঁরা জোটে থাকতে চান না। এর মানে তাঁরা সরকারের সঙ্গে নেই।
২. ফড়নবিশ আরও বলেছেন, রাজ্যপালের কাছে আরজি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর একটি ফ্লোর টেস্ট করতে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে। এদিন বৈঠকে তাঁর সঙ্গে ছিলেন গিরিশ মহাজন ও রাজ্য বিজেপি প্রধান চন্দ্রকান্ত পাতিল।
৩. দিল্লিতে ফড়নবিশ বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডার সঙ্গে ৩০ মিনিটের একটি বৈঠক করেন। সেখানে সরকার পুনর্গঠনের দাবী জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
৪. শিবসেনা বিদ্রোহীদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে ফড়নবিশ দেখা করেছিলেন। যাঁরা এখনও গুয়াহাটিতে ক্যাম্প করে রয়েছে। বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, তিনি শীঘ্রই মুম্বইতে ফিরে আসবেন। শিন্ডের দাবী, চলে যাবেন, তাঁর প্রায় ৫০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪০ জন শিবসেনা এবং বাকিরা নির্দলের।
৫.২৮৭ সদস্যের রাজ্য বিধানসভায় বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যা ১৪৪-এ দাঁড়িয়েছে। শিবসেনা, কংগ্রেস এবং শরদ পাওয়ারের জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির ক্ষমতাসীন জোটের ১৫২ জন বিধায়ক রয়েছে। ৪০ জন বিধায়ক কমানো হলে তা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে।
৬. ঠাকরের দল দাবি করেছেন, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্বিশেষে। শিন্ডে দল দলত্যাগ বিরোধী আইন থেকে পালাতে পারবে না। যতক্ষণ না শিন্ডে ও বিদ্রোহীরা বিজেপিতে যোগ দেয় বলে জানিয়েছে।
৭.ঠাকরের দল ১৭ জন বিধায়কের অযোগ্যতাও চেয়েছে। যা তাঁদের পক্ষে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যা কমিয়ে আনবে। উভয় পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। বিষয়টি এখনও বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।
৮.ঠাকরে দল সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করেছিল, ১৭জন বিদ্রোহী বিধায়কের অযোগ্যতার নোটিশের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও ফ্লোর টেস্টের অনুমতি যাতে দেওয়া না হয়। আদালত এ বিষয়ে আদেশ দিতে অস্বীকার করেছে।
৯.উদ্ধব শিবিরের দাবি, গুয়াহাটি থেকে ফিরে ২০ সেনা বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবেন। উদ্ধব এদিন বিধায়কদের তাঁর সঙ্গে বসার ডাক দেন।
১০. উদ্ধব ঠাকরে চিঠিতে জানিয়েছেন, "আমি আপনাদের কাছে আবেদন করতে চাই - সময় এখনও হারিয়ে যায়নি। অনুগ্রহ করে আসুন, আমার সাথে বসুন, শিব সৈনিক এবং জনসাধারণের মন থেকে সমস্ত সন্দেহ দূর করুন। তাহলে আমরা একটি উপায় খুঁজে বের করতে পারি।" শিবসেনা বিধায়করা বিজেপির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ইন্ধন যোগানের অভিযোগ এনেছে। যা বিজেপি অস্বীকার করেছে।