Share this link via
Or copy link
রাজ্যের ঘোষিত পুজো অনুদানের (Puja Donation) বিরোধিতায় করা মামলায় রায়দান স্থগিত রেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত দায়ের সব মামলার শুনানি হয়েছে। রাজ্যের পক্ষে এদিন আদালতে দাখিল করা হয়েছে পুজো কমিটিগুলোকে ৬০ হাজার টাকা অনুদানের সরকারি বিজ্ঞপ্তি (Notification)। সেই বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুদানকে 'পুরস্কার হিসেবে অনুদান' প্রদান হিসেবে দেখানো হয়েছে। এবং এই সংক্রান্ত বরাদ্দ হয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থ। সেটাও কোর্টকে জানিয়েছে মমতার সরকার।
এরপরেই এই বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।তাঁর সওয়াল, 'যে শহরে ভিন্ন ধর্ম এবং ভাষাভাষী মানুষের বাস, সেখানে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের জন্য সরকার আর্থিক সাহায্য করতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধান বিরোধী। রাজ্যের মানুষের করের টাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এভাবে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে টাকা বিলি করতে পারেন না। ২০২০সালে করোনা অতিমারীর জন্য পুজো কমিটিগুলোকে ৫০হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটা করোনা অতিমারীর জনসচেতনতা-সহ মাস্ক এবং স্যানিটাইজার বিলি করতে।'
আদালতকে স্মরণ করিয়ে দিতে বিকাশবাবু জানান, রাজ্যের মানুষের করের টাকায় ইমামদের দান-খয়রাতি জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও আদালতের হস্তক্ষেপের কারণে সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেখানেও একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে আর্থিক সুবিধা দিতে চেয়েছিল রাজ্য।
যুক্তি তুলে ধরে তাঁর সওয়াল, 'যেখানে বিভিন্ন ভাষাভাষী এবং বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস। সেখানে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বা সম্প্রদায়ের মধ্যে অর্থ বিলি করা হলে সমাজে তাঁর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হয় যা অনুমোদন করে না সংবিধান।'
এরপরেই রাজ্যের এজি তথা এডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে দুর্গাপুজো। শুধুমাত্র কলকাতার পুজার জন্য নয়। ফলে মামলাকারীদের শুধু কলকাতা প্রসঙ্গ উল্লেখ করলে, সেটা সঠিক নয়। রাজ্যকে এই পুজোর স্বীকৃতি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকও দিয়েছে। পুলিস-প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগবৃদ্ধির কাজ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রচার এবং প্রসার, ট্যুরিজমের প্রসার এই পুরো বিষয়টি জনস্বার্থে গৃহীত। রাজ্যের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও তার প্রচার করাই উদ্দেশ্য। এটাকে জনস্বার্থ ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? রাজ্য সরকার মনে করছে এই মামলার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
তাঁর আরও যুক্তি, 'দুর্গাপুজো শুধু এ রাজ্যের জন্য নয়, সারা দেশের মানুষের কাছে আজ তাৎপর্যপূর্ণ। আজ শুধু পুজো বলা যায় না। এই দুর্গাপূজার মধ্যে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তাও বহন করে। যে কারণে লক্ষ নয়, কোটি কোটি মানুষ আজ শারদীয়া দুর্গা উৎসবে মেতে ওঠেন।'
এই সওয়াল-জবাব শেষে, মামলাকারীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আপনারা কি কোন পরামর্শ দেবেন? সরকার যদি এই টাকা দেন ক্লাবগুলোকে দেয়, তাহলে ক্লাবগুলো কোন কোন খাতে এই অর্থ ব্যবহার করবে। অ্যাডভোকেট জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আগে যে টাকা দেওয়া হয়েছিল ক্লাবগুলোকে তার কোন হিসেব আছে? যে তারা কীভাবে, কোথায় খরচ করেছেন? এজি পাল্টা জানান, রাজ্য বাজেটের অডিট করা হয়। যদিও এই টাকা সরাসরি ক্লাবকর্তাদের হাতে দেওয়া হয় না। পুলিসের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয় টাকা, কোর্টকে জানায় রাজ্য।
এরপরেই দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষে শুনানির পর রায়দান স্থগিত রেখেছে আদালত।