কলকাতা পুরসভায় বুধবার বাজেট পেশ করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১৭৭ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করেন তিনি। করোনার কারণে আয় কমে গিয়েছিল, বললেন ফিরহাদ হাকিম। গত অর্থবর্ষে ঘাটতি ছিল ৫৮০.৭৫ কোটি টাকা। এই বছরে কর বাবদ মোট আয় ৬,০০০.৫৫ কোটি টাকা। তবে এই বছরে কর আদায় আশানুরূপ হয়নি বলে জানান তিনি।
গত আর্থিক বছরে করদাতাদের নথিভুক্ত সংখ্যা ছিল ৮.৪৭ লক্ষ। সেটা বেড়ে এই আর্থিক বছরে হয়েছে ৮.৭০ লক্ষ। তিনি বাজেটে উল্লেখ করেছেন, মহামারীর সময় নাগরিকদের আর্থিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে বকেয়া সম্পত্তিকর পরিশোধের আহ্বান জানিয়ে ওয়েভার স্কিম ২০২০ চালু হয়েছিল। এই প্রকল্প অনুযায়ী ৩১ মার্চ ২০২১ এর মধ্যে বকেয়া সম্পত্তিকর পরিশোধ করলে ১০০ % সুদে ও ৩৩% জরিমানা মকুব করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ৯৫ হাজার করদাতা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার করদাতা তাঁদের বকেয়া পরিশোধ করেছেন। যেখান থেকে মোট প্রায় ৫৩৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে এবং সুদ ও জরিমানা সহ প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা বকেয়া নিষ্পত্তি হয়েছে বলে হাউসে জানান মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
বিজ্ঞাপনমুক্ত বলয় এবং সবুজ বলয়ে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কলকাতা মহানগরীর সোন্দর্যায়ন এবং পরিছন্নতা রক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা জানালেন তিনি। ২৫২ মিলিয়ন গ্যালন জল বৃদ্ধি হয়েছে গার্ডেনরিচ ওয়াটার ওয়ার্কস থেকে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব সড়কের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে খড়গপুর আইআইটির পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। শহর জুড়ে এলইডি আলো লাগানো হচ্ছে।
মেয়র বলেন, নিকাশি ব্যবস্থা বড় চ্যালেঞ্জ। ১০০ টির বেশি পাম্প বসানো হচ্ছে। এছাড়া আরও ৬ টি পাম্পিং স্টেশন বাড়ানো হচ্ছে। জল জমার সমস্যা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। বিপুল সংখ্যক গৃহহীন মানুষদের কথা মাথা রেখে ৯ টি আশ্রয়স্থল করা হয়েছে। ৭,৯৮,১৪৭ টি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বিলি করা হয়েছে।
এদিন তিনি রাস্তা নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য দেশবিদেশের শিল্পপতিদের আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে কলকাতা পৌর সংস্থাও পিছিয়ে থাকতে চায় না। তাই ইস্ টু বিজনেসের জন্য সমস্ত কাজকর্ম অনলাইন করে দেওয়া হচ্ছে বলে এদিন সাংবাদিকদের জানান তিনি।
তবে ধাপায় কঠিন বর্জ্য ক্ষেত্রে একটু সমস্যা রয়েছে বলে জানান ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের একটা ডেডলাইন দিয়েছে গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। আরও ২ বছরের মধ্যে ধাপা থেকে বর্জ্য স্তূপ সরিয়ে নিতে হবে। সেটা খুব শীঘ্রই সরিয়ে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র। ফিরহাদ হাকিম জানান, ইতিমধ্যে কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১২৫ টি কম্প্যাক্টর স্টেশন করা হয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি হলের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
আদিগঙ্গা সংস্কারের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু করা হবে। ঐতিহ্যবাহী ভবন বা হেরিটেজ বিল্ডিং রক্ষার ক্ষেত্রে দরকার পড়লে সেই বাড়ি অধিগ্রহণ করে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। কারণ অনেক হেরিটেজ বাড়ি প্রোমোটারচক্রের জন্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে এদিন অভিযোগ করেন ফিরহাদ। একইভাবে বিপজ্জনক বাড়ির ক্ষেত্রে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।