আলিপুর সংশোধনাগার, এখানে ইতিহাস কথা বলে। ইতিহাসের পাতায় এই কারাগারের জন্ম ১৯০৬ সালে। সেসময় ইংরেজ শাসকদের পরিকল্পনা ছিল অজ্ঞাতসারে বন্দিদের ওপর নজর রাখা। তাই জেলের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছিল একটি টাওয়ার। সেই টাওয়ারকে ঘিরে তৈরি বন্দিদের রাখার বিভিন্ন ওয়ার্ড।
গত কয়েক বছর ধরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে কোনও বন্দি নেই। বন্দিদের অধিকাংশকেই বারুইপুরের নতুন সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিগত কয়েক বছর প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা জেলখানা জুড়ে গজিয়ে উঠেছে ঝোপঝাড়। বর্তমানে সাফাইয়ের কাজ চলছে শতাব্দীপ্রাচীন এই সংশোধনাগারের। সূত্রের খবর, এখানে তৈরি হতে চলেছে একটি সংগ্রহশালা। শতাব্দীপ্রাচীন এই সংশোধনাগারের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসও। সেই ঐতিহ্যকে বজায় রেখেই সংগ্রহশালা নির্মাণের পরিকল্পনা।
আলিপুর সংশোধনাগারে এবার বন্দি হবে স্মৃতি, অপরাধী নয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে আলিপুর জাজেস কোর্ট রোডের এই লাল বাড়িতেই একসময় ঠাঁই মিলেছিল ঋষি অরবিন্দ ঘোষ, চিত্তরঞ্জন দাশের মতো দেশের বীর সন্তানদের। এখানেই কুঠুরিতে বন্দি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর বিপ্লবী সত্তার বীজ বপন হয়েছিল এই সংশোধনাগার থেকেই। স্বাধীনতা সংগ্রামী অনন্তহরি মিত্র, প্রমোদরঞ্জন চৌধুরী, দীনেশ গুপ্তের মতো কত শত বন্দিকে ফাঁসির মঞ্চে দেখেছে এই সংশোধনাগার।
ভবনগুলির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুযায়ী জেলের হেরিটেজ ভবনগুলি, নির্দিষ্ট কারাগারগুলি এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি বিজড়িত ফাঁসির মঞ্চকে রক্ষা করা হবে। সূত্রের খবর, মূলত তিনভাগে ভাগ করা হবে মিউজিয়মটিকে। শুরুতে থাকবে টিকিট কাউন্টার।
ইতিহাসের সেই সব অধ্যায়কে সাক্ষী রেখেই সংশোধনাগার পরিণত হচ্ছে সংরক্ষণাগারে। নাম দেওয়া হচ্ছে আলিপুর ইন্ডিপেন্ডেন্স মিউজিয়াম। সেখানে রাখা হবে ইতিহাস বিজড়িত বেশ কিছু নমুনা। থাকবে বিপ্লবীদের সংগ্রামকাহিনীর নথি সম্বলিত বিবরণ। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চলছে প্রস্তুতি। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা। গোটা রাজ্যবাসী এখন অপেক্ষায়, কবে খোলে ইতিহাসের দরজা।