গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বর্তমান আইন অনুযায়ী, ২৪ সপ্তাহ বা ৬ মাসের পর গর্ভপাত বেআইনি। কিন্তু হাইকোর্টের এদিনের পর্যবেক্ষণ, ৩৫ সপ্তাহেও গর্ভপাত (Abortion) করানো যাবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কোনও সমস্যা বা প্রাণহানি হলে দায় বর্তাবে সেই দম্পতির উপর। তৃতীয় কাউকে দোষারোপ করা যাবে না। বৃহস্পতিবার এই মর্মেই রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
এযাবৎকাল বলা ছিল, ৬ মাসের পর গর্ভপাত হলে মায়ের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। কিংবা প্রাণহানির আশঙ্কাও করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই ২৪ সপ্তাহ পর গর্ভপাতের কোনও রায় দেওয়া হয়নি। কিন্তু এদিনের রায়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের। জানা গিয়েছে, গর্ভপাতের আবেদন করে হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে মামলা দায়ের করেন উত্তর কলকাতার এক দম্পতি। বিয়ের পর থেকেই শারীরিক জটিলতার কারণে সেই দম্পতি সন্তান ধারণ করতে পারেননি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর বর্তমানে গর্ভবতী সেই মহিলা।
কিন্তু গর্ভধারণের পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েও সুরাহা হয়নি। চিকিৎসকদের মন্তব্য, বর্তমান শারীরিক অবস্থায় ওই মহিলা যদি সন্তান প্রসব করেন, তা হলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। এমনকি, ভ্রুণের স্পাইনাল কর্ডে জটিল জন্মঘটিত সমস্যা রয়েছে। তাই জন্মের পরেও সদ্যোজাত সুস্থ হবে না। তাকে জরগ্রস্ত হয়ে গোটা জীবন কাটাতে হবে। এরপরেই আগামি সন্তানের কথা ভেবে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই দম্পতি। এবং সেই সিদ্ধান্তকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন তাঁরা।
এরপরেই এসএসকেএম হাসপাতালে ন’জন চিকিৎসকের একটি কমিটি গঠন করেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। চিকিৎসকদের কমিটি বিচারপতিকে জানায়, সন্তান প্রসব করলে ওই মহিলা এবং সদ্যোজাত দু’জনেরই ক্ষতি হবে। সেই মতামত এবং হবু অভিভাবকদের অবস্থান সম্পর্কে চূড়ান্ত হয়ে ৩৫ সপ্তাহেও গর্ভপাতের আর্জি মঞ্জুর করেন বিচারপতি মান্থা। তবে গর্ভপাত পরবর্তী সময়ে বাড়াবাড়ি হলে, তাঁর দায় তৃতীয় পক্ষের নয়। এমনটাই স্পষ্ট করেছেন বিচারপতি মান্থা।