২৮ মার্চ, ২০২৪

Court: বেআইনি আবেদনপত্র মামলায় শিক্ষা সচিবের মুখে ব্রাত্য বসুর নাম, কী বললেন তিনি?
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2022-11-25 14:45:46   Share:   

তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) প্রতীক ও দল হিসেবে তাদের অনুমোদন প্রত্যাহারের ইচ্ছাপ্রকাশ, নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission) এই বিষয়ে জানানোর ভাবনা পর্যবেক্ষণের সুরে করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বেনামী আবেদনপত্র মামলায় শুক্রবার কোর্ট নির্দেশে হাজিরা দেন শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তারপরেই পর্যবেক্ষণের সুরে এই মন্তব্য বিচারপতির (Justice Ganguly)। তিনি জানান, 'হয় গণতন্ত্র সঠিক হাতে নেই, না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হয়নি। কিছু দালাল যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত, তাঁরা আদালতের (Calcutta High Court) নামে যা ইচ্ছা বলছেন। বলছেন যে নিয়োগ হলেই আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছে। আদালত কি এগরোল নাকি যে আসলেই স্থগিতাদেশ পেয়ে যাবে?' ক্ষোভের সুরে এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও এদিন এজলাসে তিনি জানান, যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এসেছে। আমি মানি, তাই আমি এই মামলায় কোনো নির্দেশ দিতে পারছি না। আজকের কোনও রেকর্ড আমি রাখতে পারবো না। 

তবে এদিন এজলাসে শিক্ষা সচিব মণীশ জৈনকে বেনামী আবেদনপত্র মামলায় অতিরিক্ত শূন্যপদে নিয়োগ বা সুপার নিউমেরিক পোস্ট সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রশ্ন করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, 'আপনি কি জানেন যে কমিশনের আইন অনুযায়ী কোন বেআইনি নিয়োগ করা যায় না?' শিক্ষা সচিব জানান, 'হ্যাঁ।' তারপরেই আদালতের প্রশ্ন, 'তাহলে অতিরিক্ত শূন্যপদ কেন তৈরি করা হল?' জবাবে শিক্ষা সচিব জানান, উপযুক্ত স্তর থেকে নির্দেশ এসেছিল। ব্রাত্য বসুর নির্দেশ এসেছিল। তিনি আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিল। আমাদের আইনজীবী এবং অ্যাডভোকেট জেনারেলের  সঙ্গে কথা হয়েছিল। আইন দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। মুখ্যসচিবকে জানানো হয়েছে, ক্যাবিনেটে নোট পাঠানো হয়েছে।' পাল্টা বিচারপতি প্রশ্ন করেন, 'অবৈধদের নিয়োগ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীরা?' 


শিক্ষা সচিবের তরফে জবাব আসে 'না'। বিচারপতির প্রশ্ন, 'আপনার কি মনে হয় না যে অবৈধদের বাঁচানোর জন্য এই অতিরিক্ত শূন্যপদ? অবৈধদের সরানোর কোন সিদ্ধান্ত হয়েছিল?' এই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা সচিব জানান, 'আমরা আইন দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।' এরপরেই বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতির প্রশ্ন, 'আমি বিস্মিত যে কীভাবে ক্যাবিনেটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? যেখানে আইনের কোন সংস্থান নেই। আপনি কী মনে করেন যে অবৈধদের চাকরি বাঁচানো দরকার?' জবাবে শিক্ষা সচিব জানান, 'না'।

এরপরেই আদালতের প্রশ্ন, 'কোন ক্যাবিনেটে এই সিদ্ধান্ত হয়?' মণীশ জৈন উত্তরে জানান, আমরা আইন দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।' বিচারপতির প্রশ্ন, 'এটা কোনও রাজ্যের নীতি হতে পারে? আবার বলা হচ্ছে যে কারও চাকরি যাবে না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবীর কাছে আবেদন দাখিল করার কোন লিখিত নির্দেশিকা নেই। অতিরিক্ত প্রায় ২৬২ কোটি টাকা কেন প্রতি বছর ব্যয় করা হবে এই অযোগ্যদের জন্য।' জবাবে শিক্ষা সচিব বলেন, 'আমরা অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গেও এবিষয়ে কথা বলেছি।' 

এরপরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, 'আপনার কি মনে হয় না যে ক্যাবিনেট এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংবিধানবিরোধী কাজ করেছে? ক্যাবিনেটের সদস্যরা সই করলেন? কেউ তাঁদের সতর্ক করলেন না?' মণীশ জৈন জবাবে বলেন, 'আমি সেখানে ছিলাম না।' এরপরেই ক্ষুব্ধ বিচারপতির পর্যবেক্ষণের সুরে বার্তা, 'হয় গণতন্ত্র সঠিক হাতে নেই, না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হয়নি। ক্যাবিনেটকে বলতে হবে অযোগ্যদের পাশে তারা নেই।

১৯ মে-র বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে। না-হলে এমন পদক্ষেপ করা হবে যা গোটা দেশ কখনও দেখেনি। আমি ক্যাবিনেটকে পার্টি করে দেব। সবাইকে এসে উত্তর দিতে হবে। শোকজ করতে পারি।' তাঁর মন্তব্য, বিধানসভার দলনেতা হন মুখ্যমন্ত্রী, আর লোকসভায় দলনেতা প্রধানমন্ত্রী। আমি ইলেকশন কমিশনকে বলব তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো প্রত্যাহার করার জন্য, দল হিসাবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করতে বলব নির্বাচন কমিশনকে। সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছা করা যায় না।' 

ইতিমধ্যে বেআইনি আবেদনপত্র মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য এবং এসএসসি। হাইকোর্টের ২৩ নভেম্বরের নির্দেশের উপর তিন সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য এবং এসএসসির মামলা দায়ের প্রসঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী জানান, দেশের প্রধান বিচারপতির এজলাসে জরুরি ভিত্তিতে এই মামলা শোনার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তিনি গুরুত্ব বুঝে তিন সপ্তাহের জন্য অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে এবং আগামি শুনানির দিন ধার্য করেছেন। সেই মোতাবেক কলকাতা হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে। ২৩ নভেম্বর সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআই তদন্ত নিয়ে এসএসসির আবেদন সংক্রান্ত যে নির্দেশ দিয়েছিল, পুরো বিষয়টা স্থগিতাদেশ দিয়েছে।


Follow us on :