গত কয়েকদিন ধরেই হাওয়া অফিস থেকে বারবার কালবৈশাখীর সর্তকতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এরমধ্যেই বিপত্তি। শনিবার প্রচণ্ড ঝড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে (Rabindra sarobor) ২ কিশোরের। রোয়িং ক্লাবে (Rowing club) মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পরই একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘটনার পর প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা তল্লাশি চালায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। অবশেষে ২ জনের দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে (hospital) নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাদের মৃত (death) বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
একদিকে সন্তান হারিয়ে শোকস্তব্ধ পরিবার, অন্যদিকে এই মৃত্যুর দায় কার, সেই নিয়ে শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি। ঘটনার পর লেক ক্লাবের এক মহিলা সদস্য ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তিনি অভিযোগ করেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও কেন নামতে দেওয়া হল? নামার আগে কেন সুরক্ষার স্বার্থে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না? কেন বোটে ৫ জন ছিল, যেখানে ৪ জনের বেশি মানুষের থাকার কথা নয়।
অন্যদিকে দুর্ঘটনার পরই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রাও। তাঁদের অভিযোগও একই। আগে থেকে সতর্কতা থাকার পরও কেন এই ঘটনা? কেন কোনওরকমের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হল না? স্থানীয়রা জানান, এই সময়ে লাইভ জ্যাকেট অবশ্যই বাধ্যতামূলক করা উচিত, ঝড় উঠুক বা না উঠুক। কারণ, এখানে যারা সাঁতার শিখতে আসছে, তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। সুতরাং এই সময় যদি পাঁক বা অন্যকিছুতে পা জড়িয়ে যায়, তাহলে যে কোনও সময় প্রাণহানি বা বড় বিপদ ঘটতে পারে। নেই রেসকিউ বোটও। তাই এক্ষেত্রেও ক্লাব কর্তৃপক্ষের আরও বেশি সতর্কতা এবং দায়িত্ব পালন করা দরকার ছিল বলেই মনে করছেন তাঁরা।
ঘটনার সময় কোনও রেসকিউ বোট না থাকার তীব্র প্রতিবাদ জানান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উল্লেখ্য, লেকে পেট্রোল চালিত বোর্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেএমডিও, জানালেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ডিজেল চালিত রেসকিউ বোট চালানোর জন্য তিন ক্লাবকেই শো-কজ করে কেএমডিএ। গত ১৮ তারিখ শো-কজ নোটিসও পাঠানো হয়। তারপরেই রেসকিউ বোট বা ফলো বোট বন্ধ করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার পর কেএমডিএ-র কাছে ফের ফলো বোট চালানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
তবে মৃত সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায়ের বাবার বক্তব্য, ঘটনাটি ঘটার দুঘণ্টা পর জানতে পারেন এই বিষয়ে। তাও ক্লাব কর্তৃপক্ষ বা স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি। সৌরদীপের এক বন্ধুর মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন। তাঁর আরও অভিযোগ, এই দুর্ঘটনার অভিযোগ দায়ের করে কী হবে? ছেলেকে তো আর ফিরে পাবেন না তাঁরা। বিচারও পাবেন না। খবর পাওয়ার পরই সাড়ে ছটা নাগাদ তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন।
সৌরদীপের দাদা জানান, সৌরদীপ সাঁতার জানত। তবে রোয়িং শিখছিল তিন মাস ধরে। আজ ফাইনাল সেই প্রতিযোগিতার ছিল। সেই কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওদের কালকে প্র্যাকটিস করানোর জন্য আসতে বলে। এরপরই এই দুর্ঘটনা।