২৮ মার্চ, ২০২৪

Shweta: 'আমি মহিলা, আমাকে নিয়ে রঙ চড়িয়ে কথা বললে মানুষ গিলবে,' সাক্ষাৎকারে বললেন শ্বেতা
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-03-23 13:01:47   Share:   

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির (Scam) তদন্ত এগিয়েছে। জলও গড়িয়েছে অনেক দূর। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য। গ্রেফতার হয়েছেন তৎকালীন বেশ কিছু সচিবও। সেই সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছেন সদ্য বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু, দালাল কুন্তল, অয়ন শীল সহ প্রমুখ ব্যক্তিগণ। অপরাধের তল পেতে ইডি এবার গ্রেফতার করেছে অয়ন শীল নামক এক প্রোমোটার ও সরকারি পঞ্চায়েত সচিবকে। যার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বহু নথি, সম্পত্তির কাগজ, ওএমআর শিট সহ বিভিন্ন নথি। যা ঘেটে ইডির কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, শুধু শিক্ষা দুর্নীতি নয়, দুর্নীতি হয়েছে রাজ্যের বহু দফতরে। নিয়োগ হয়েছে দেদারে, সেসঙ্গেই বেমালুম টাকা তুলেছেন এই অভিযুক্তরা। এখন তবে বিতর্কের কেন্দ্র কী শুধুই নিয়োগ? 

শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতায় গ্রেফতার হয়েছেন এ রাজ্যের শাসকদলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী সহ তৃণমূল নেতারা। কমবেশি তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে যোগ রয়েছে এক রহস্যময়ীর নারীর। প্রত্যেকের বাড়ি, অফিস ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় নথি। তা খতিয়ে দেখে ইডির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রত্যেকের সঙ্গেই রহস্যময়ীদের গভীর যোগযোগ আছে। লেনদেন হতো মোটা অঙ্কের টাকা। কেউ পেতেন বিলাসবহুল গাড়ি, আবার কেউ পেতেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর বান্ধবীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৫০ কোটি নগদ টাকা সহ মোটা অঙ্কের গহনা, সম্পত্তি ও জমিজমার নথি। যার কিছুটা পার্থ, কিছুটা পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতার নামে।

ঠিক একইভাবে গ্রেফতারির পর অয়নের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে নাম পাওয়া গিয়েছে শ্বেতা চক্রবর্তী নামের এক নারীর। কে এই নারী? কী পরিচয় তাঁর? কেন তাঁর নাম উঠছে? কী করে তাঁর সঙ্গে অয়নের যোগাযোগ? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সংবাদমাধ্যম। শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। শিরোনামে ওঠার পর অবশ্য ফাঁস হয় আরও তথ্য।

জানা গিয়েছে, কামারহাটি পুরসভার সামনে একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে থাকেন অয়ন এবং শ্বেতা। একজন বন্ধু-বান্ধবী এক ফ্ল্যাটে থাকলে সমস্যা কোথায়? খোঁজ করে ওই আবাসনের এক কর্তার মারফত জানা গিয়েছে, ওই আবাসনে মামা-ভাগ্নি পরিচয়ে থাকতেন শ্বেতা ও অয়ন। যার পরে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তোলে সংবাদমাধ্যম। সে সঙ্গে ইডি জানিয়েছে অয়নের ব্যাঙ্ক থেকে শ্বেতার ব্যাঙ্কে লেনদেনের কথা, সব মিলিয়ে জটিল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। যদিও এ সমস্ত ঘটনার পরিপেক্ষিতে বুধবার শ্বেতার স্পষ্ট জবাব, 'আমি মহিলা, আমাকে নিয়ে রঙ চড়িয়ে কথা বললে মানুষ গিলবে, টিআরপি বাড়বে, সে জন্যই মিডিয়া এমন প্রচার করছে।'

অয়নের গ্রেফতারির পর কার্যত নিখোঁজ ছিল শ্বেতা। তাঁর বাড়ি গিয়েও মেলেনি দেখা। শ্বেতার পরিবারের কেউ কথা বলতে চাননি। বুধবার সিএনকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি অনেক কিছুই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। শ্বেতা চক্রবর্তী নৈহাটী পাল পাড়ার বাসিন্দা। ২০১৫ সালে পরীক্ষা দিয়ে হুগলি জেলার একটি পঞ্চায়েতে সহকারীর চাকরি পান। সেখান থেকে ২০১৬ সালে হগুলির ডুমুরদহ ১ নং পঞ্চায়েতে পোস্টিং হন। সেখানেই অয়ন শীলের সঙ্গে আলাপ বলে জানান তিনি। আমাদের প্রতিনিধি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ২০১৮ সালে সোমরা ১ নং পঞ্চায়েতে পোস্টিং হলেও সেখানে যোগ দেননি শ্বেতা। বুধবার আমাদের সাংবাদিককে শ্বেতা জানান, '২০১৯ সালে পুরসভায় চাকরিতে যোগ দেন।'

অয়নের ব্যাঙ্ক থেকে লেনদেনের প্রসঙ্গে শ্বেতাকে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন, 'অয়ন শীল প্রোমোটার ছিল। অয়নের থেকে ফ্ল্যাট কিনি। পরে সেই ফ্ল্যাট নেব না বলে ঠিক করি। সেই টাকাই অয়নের ব্যাঙ্ক থেকে আমার ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছিলেন অয়ন।' তিনি জানান, 'আমাদের সঙ্গে যা লেনদেন ও চুক্তি ছিল সবই আইনি পদ্ধতি মেনে। অয়নের ব্যাঙ্ক থেকে আরও ব্যাঙ্কে লেনদেন হয়েছিল, তাঁদেরকে কেন ধরছেন না।'

বুধবার সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, 'আমি মহিলা, আমাকে নিয়ে রঙ চড়িয়ে কথা বললে মানুষ গিলবে, টিআরপি বাড়বে। সে জন্যই মিডিয়া এমন প্রচার করছে। আমার মান-সন্মান, ব্যক্তিগত জীবন সবই নষ্ট করছে।' এছাড়া তিনি বলেন, 'কাজের বাইরে অয়নের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ ছিল না। ইডি যদি ডাকে যাবেন? ওই প্রশ্নের উত্তরে শ্বেতা বলেন, 'অবশ্যই যাবো, এখনও ডাকে নি, ডাকলে অবশ্যই যাবো। মামা - ভাগ্নি পরিচয়ে থাকা নিয়ে উনি বুধবার কিছু বলেননি।'


Follow us on :