২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Mourn: প্রয়াত সুমিত্রা সেন, স্মৃতিচারণায় অভিনেতা-বিধায়ক চিরঞ্জিত
CN Webdesk      শেষ আপডেট: 2023-01-03 12:32:59   Share:   

চিরঞ্জিত (অভিনেতা-বিধায়ক ) : এটা কঠিন বাস্তব এই ধরাধামে যখন এসেছি তখন এক দিন না একদিন যেতেই হবে, আজ নয় কাল। কিন্তু তারই মধ্যে যখন আপনজন বা প্রিয় কোনও মানুষ চলে যান ওপারে তখন তো মনে হয় 'আর কিছুদিন রইলে'..। তবু মনে রেখো বলে চলে গেলেন সোনালী যুগের শেষ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুমিত্রাদি, সুমিত্রা সেন। আমাদের ছেলেবেলায় পরিবারের অনেক বাধ্যতামূলক বিষয়ের মধ্যে একটি ছিল রবীন্দ্র সংগীত। গাওয়া না হলেও শোনা। আমার বাবা সুরসিক চিত্রশিল্পী শৈল চক্রবর্তীর অবসর ছিল কিন্তু রবি ঠাকুরের গান। তাঁর মুখেই অনেক কথা শুনতাম। দেবব্রত বিশ্বাস, শান্তিদেব ঘোষ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্রের কথা।

একটা বিষয়ে আমরা পিতাপুত্র এক মত ছিলাম, সুমিষ্ট রবি ঠাকুরের গান মানে সুমিত্রাদি। কী ভীষণ মিষ্টি গলা ছিল তাঁর। ইস কেন বারবার বলতে হচ্ছে 'ছিল' কথাটা। ৮৯ বয়স হয়তো অনেকটা কিন্তু তবু তাঁর গানের বয়সের কাছে তুচ্ছ।

রবি ঠাকুরের গানের অনেকগুলো ঘরানা ছিল। আমার ধারণা রবীন্দ্র সংগীতে শান্তিনিকেতনের বাতাবরণে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, গণসংগীতের তীব্র দহনে সুচিত্রা মিত্র এবং একেবারে আমাদের গ্রাম থেকে শহরে সাধারণ ভাবে শান্তিনিকেতনের ধারার বাইরে সকলের সুমিত্রা সেন। প্রথম জীবনে বিয়ের আগে ছিলেন সুমিত্রা দাশগুপ্ত। শুরুর পথে নজরুল আধুনিক অনেক গান গাইলেও শেষ পর্যন্ত পাকাপাকি নিজের কর্তার উৎসাহে রবীন্দ্রনাথের জগতে। গাইলেন 'ওলো সই ওলো সই", আমার ইচ্ছা করে তোদের মতো মনের কথা কোই তাই প্রথাগত পদ্ধতি বাদ দিয়ে নিজের মতো গাইলেন।

আমি একবার বাল্যকালে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বা সুচিত্রা মিত্রকে দেখেছি কিন্তু সত্যি আলাপ ছিল না, আমি তো তখন শিল্পী শৈল চক্রবর্তীর ছেলে, যে মিত্র ইনস্টিটিউটে পড়ে আর ঢাকুরিয়ায় ফুটবল খেলে। কিন্তু তখনকার গানের জলসায় শুনলাম সুমিত্রাদির গান।কাছ থেকে দেখলাম। পরে টেলিভশন আরও পরে সিনেমায় এসে যখন সামান্য নামধাম হলো ( আজকাল ওটুকু বলতে পেরে খুশি ) তখন সুমিত্রাদির সঙ্গে আলাপ হলো। নানা অনুষ্ঠানে দেখা হতো, কথা হতো। কম কথা বলতেন শুনতে ভালোবাসতেন।

বলেছিলেন, আমরা ওপার বাংলার বদ্যি। বিয়েও হয়েছে সেনগুপ্তর সাথে। আমাদের প্রথম বিষয়ে হলো পড়াশুনো করতে হবে সাথে সাংষ্কৃতিতে আগ্রহ রাখতে হবে। চমৎকার কথা।

দেখুন, পেশাদাররা মনে করেন পেশার কারণে সব কিছু সরিয়ে পেশায় মন দিতে হয়, কিন্তু সুমিত্রাদি সেই ধারণা বদলে দিয়েছিলেন। সংসারধর্ম পালন করেও সাংস্কৃতিক জগতে থাকা যায়। এই শিক্ষা আমার পেশাদারি জীবনে প্রথম শিক্ষা। আজ সিনেমার জগৎ থেকে রাজনৈতিক জগতে থাকলেও আমি কিন্তু ভীষণই সংসারী। পরিবারকে সুযোগ পেলেই সময় দিই। সুমিত্রাদির আমলে অনেক রথী মহারথী থাকলেও তিনি ছিলেন অজাতশত্রু। সকলের সঙ্গে মিলে সাধারণের মধ্যে অসাধারণ ছিলেন তিনি। একবার হেসে বলেছিলেন, ইন্দ্রানী তো যথেষ্ট নাম করেছে কিন্তু শ্রাবনী যে নিজের ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এতো দ্রুত এগিয়ে আসবে বুঝতেই পারিনি। চোখে জল এসে গিয়েছিলো তাঁর। বলেছিলাম, আপনারই তো রত্ন যুগল।

অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে আজ কিন্তু আর লাভ কি? তাঁরই একটা প্রিয় গান দিয়ে শেষ করি। "মেঘ বলেছে যাবো যাবো, রাত বলেছে যাই। সকাল বলে কুল মিলেছে - আমি তো আর নাই" বিদায় দিদি। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)


Follow us on :