প্রসূন গুপ্ত: কথাই আছে, খাচ্ছিলো তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হলো এঁড়ে বাছুর কিনে। রঙিন দুনিয়া থেকে সারাবিশ্বে বহু মানুষ রাজনীতিতে এসেছেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারতে তো এমন উদাহরণ ঝুড়িঝুড়ি| মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন সিনেমা জগৎ থেকে এসেছিলেন। শ্রীলংকার গত পার্লামেন্টে বহু প্রাক্তন ক্রিকেটার ছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের রাজনীতি চিরকাল বিতর্কিত।
স্বাধীনতা উত্তর যুগ থেকেই তাদের রাষ্ট্রপ্রধানরা সেদেশের সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল হয়েই কাজ করেছেন। বহুবার সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করেছে, তবে ইদানিং স্ট্রাটেজি বদলে সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর ভোট নামের একটা ছেলেখেলা করছে। এবং পাঁচ বছর কাউকেই টিকতে দিচ্ছে না। পাক গুপ্তচর সংস্থা এবং সেনাবাহিনী, ভোট জিতে ক্ষমতায় আসা কোনও নেতাকে জনপ্রিয় হওয়ার আগেই সরিয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা তেমনটাই মনে করছেন। সেখানে ব্যতিক্রম নয় পাকিস্তানের সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ইমরান খানও। পড়শি দেশের মধ্যরাতের অনাস্থা ভোট 'নাটক' দেখে সেই দাবি করছেন তাঁরা।
তবে সবুজ মাঠে, ক্রিকেটের আঙিনায় সর্বকালের সেরা তিন অধিনায়কের মধ্যে অবশ্যই ইমরানের নাম আসবে। জেদ এবং দৃঢ়তার সঙ্গে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তানকে ১৯৯২-র বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন তিনি। কাপ জেতার পর দেশের মানুষের কাছে ইমরান হয়ে ওঠেন ঈশ্বর।
এখানেই ত্রুটি করে ফেলেন তিনি। এমনটাই বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। ২২ গজ ছেড়ে রাজনীতির জগতে চলে আসেন এই খান। তিনি হয়তো মনে করেছিলেন যা ধরবেন, সেটাই সোনা ফলবে। পাকিস্তানের পূর্ব ইতিহাস তিনি কি জানতেন না, বা আইএসআই সম্বন্ধে কি তাঁর ধারণা ছিল না? তিনি কি জানতেন না পাকিস্তানে কোনও রাষ্ট্রনায়ককে টানা ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। অবশ্যই সেনাবাহিনী এবং আইএসআইয়ের চক্রান্তে। এমনটাই বারবার অভিযোগ করে এসেছে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্ক বিশারদরা। ইতিমধ্যে নিহত হয়েছেন ৪ জন পাক রাষ্ট্রপ্রধান। লিয়াকত আলী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, জিয়াউল হক এবং বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করা হয়েছে। বাকি প্রায় সবাইকে ক্ষমতা হারিয়ে জেলে থেকছেন নয়তো নওয়াজ শরিফের মতো নির্বাসিত। এটাই দস্তুর পড়শি দেশের রাজনৈতিক দস্তুর।
তবে পাকিস্তান বরাবর প্যারাসাইট বা পরনির্ভরশীল দেশ। কখনও আমেরিকা, কখনও পুতিনের রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেছে। ওদেশে কৃষি বা শিল্পের অগ্রগতির কোনও বালাই নেই। ফলে অর্থসাহায্যের জন্য চিরকাল এই সমস্ত দেশের দাসত্ব করতে হয়েছে। এ কারণেই কোনও রাষ্ট্রপ্রধান এদেশে জনপ্রিয় হতে পারেননি। একই ফাঁদে পা দিয়ে নিজের জনপ্রিয়তা হারালেন ইমরান সেই সাথে প্রধানমন্ত্রিত্ব।