বাড়ি থেকে অনেক দূরে ভাড়াবাড়িতে কোনওরকমে দিন গুজরান। তার উপর সারা সপ্তাহের বাজার একদিনেই করে মজুত করতে হচ্ছে। অনেক সময়ই ঘরে খাবার থাকছে না। না খেয়েই একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে কোনওরকমে শরীরখানা বিছানায় এলিয়ে দেওয়া। ভোর হতেই কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা। এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য কোনও গাড়ি-ঘোড়া নেই। হাঁটতে হাঁটতে কোনওমতে হাসপাতালে পৌঁছনো গেল। এরপর দমআঁটা পিপিই কিট পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মৃতপ্রায় রোগীদের শুশ্রূষা করে চলা। নিজের জীবনের বাজি রেখে, অন্যের জীবন রক্ষা করার কঠিন লড়াই চলেছে পুরোদমে। দিনের শেষে, ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরে যখন বাড়ি ফিরলেন, রুখে দাঁড়াল পাড়ার প্রতিবেশীরা। তাঁরা করোনা আক্রান্ত রোগীর পরিষেবা করে এসেছেন, তাঁরা এলাকায় ঢুকলে পাড়ার বাসিন্দাদের অসুবিধা! এক রাতের মধ্যে পাড়াছাড়া হতে হবে তাঁদের।
কোভিডের ঢেউ যখন আছড়ে পড়েছিল, তখন শহরে নার্সদের (Nurse) এমন করুণ পরিণতির খবর উঠে এসেছে বারবার। মানুষকে চিকিৎসা (Treatment) পরিষেবা দিতে গিয়েই নিজেদের আক্রোশের সম্মুখীন হতে হয়েছে বারবার। তবু তাঁরা অবিচল থেকেছেন। মানুষকে সেবা প্রদানের যে শপথ নিয়েছিলেন, তা থেকে বিচ্যুতি ঘটেনি কখনও। ভাগ্যিস সেই সমস্ত নার্সিং স্টাফেরা ছিল। চিকিৎসকদের পাশাপাশি তাঁদের কুশলী পরিষেবায় এযাত্রায় কোনওমতে বেঁচে ফিরেছেন বহু মানুষ।
গোটা বছর জুড়েই তাঁদের অবদান আমাদের ছুঁয়ে যায়। একটা দিন না হয় তাঁদের শ্রদ্ধার জন্য রইল। আজ সেই সমস্ত নার্সদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। প্রতি বছরের ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস (International Nurses Day) পালিত হয়ে আসছে। সমাজের প্রতি নার্সদের অবদান, যেভাবে তাঁরা অসুস্থদের শুশ্রূষা করেন, তা সকলের সামনে তুলে ধরতে এই দিনটি পালন করে বিশ্ব।
১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির অভিজাত পরিবারে জন্ম আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের। ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটি 'ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে' হিসাবে পালিত হয়ে আসছে গোটা বিশ্বে। আধুনিক নার্সিংয়ের জননী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের (Florence Nightingale) জন্মদিন ১২ মে। তাই এই দিনটি পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে। গোটা বিশ্বে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অন্যান্য পেশার থেকে নার্সের সংখ্যা বেশি। আধুনিকতম স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগীদের চাহিদা সম্পর্কে ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজন ইত্যাদি পড়ে তার মধ্যে। প্রতিটি দেশ নিজের নিজের মতো করে পালন করে এই দিনটি।