একটা সময় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির পর সুবক্তা হিসাবে সুনাম ছিল মদন মিত্রের। শিক্ষিত মদনবাবু ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও ৯০ এর দশকেও খবরের শীর্ষে আসতে পারেননি। তৃণমূল কংগ্রেস গঠন হওয়ার পর তিনি যোগ দেন এই দলে। লড়াকু নেতা ছিলেন, বিভিন্ন মঞ্চে জ্বালাময়ী ভাষণ দিতেন। ভোট রাজনীতিতে খুব সুবিধা করতে পারেননি তখন। কিন্তু বিভিন্ন দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতেন। ২০০৯ এ দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিতে আসেন। ২০১১ র নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে জিতে রাজ্যের উপমন্ত্রী হন। ক্রীড়া ও যুব দপ্তরের সঙ্গে পরিবহণ দপ্তরের দায়িত্ব পান তিনি।
এরপরই তাঁর জীবনে কঠিন সময় নেমে আসে। সারদা চিটফান্ড কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে দু বছর জেলে কাটান। অসুস্থও হয়ে পড়েন প্রৌঢ় মদন। এরই মাঝে ২০১৬ র নির্বাচনে পরাজিত হন। ফের অর্জুন সিংয়ের কেন্দ্রে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে পরাজিত হন। ফের জিতে আসেন ২০২১ এর নির্বাচনে। উত্থান-পতনের চলমান চরিত্র মদন মিত্র।
কিন্তু কয়েক বছর হল ফিল্ড নেতা নিজেকে বদলে মজাদার রঙিন মানুষে পরিণত করেন। এবার মন্ত্রী না হলেও পরোয়াহীন মদন নিজেকে ব্যস্ত রাখেন হাসিঠাট্টা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কে।
বছরের গোড়ায় দলবদলের খেলায় তৃণমূলের হয়েই লড়াই করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তখন মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন স্টেজে গায়িকাদের সঙ্গে তাঁকে গান গাইতেও দেখা যায়। "ওহ লাভলি" ডায়লগ তখন তাঁর মুখে সর্বক্ষণের সঙ্গী। প্রেসের সামনে কখনই সিরিয়াস দেখা যায়নি তাঁকে। এ যেন বদলে যাওয়া মদন। ভোটে দাঁড়ালেন ফের কামারহাটি থেকে এবং জিতলেন। কিন্তু মন্ত্রিত্ব জুটল না। ভোটের সময় এবং পরেও সিনেমা জগতের নায়িকা থেকে বিউটিশিয়ানদের সঙ্গে দেখা যেত নাতির দাদু হয়ে যাওয়া মদন মিত্রকে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ঠাট্টা করে বলেওছেন যে, মদন একটু কালারফুল। এরপরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে ওহ লাভলি বলে মজা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
সম্প্রতি বিজেপির বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে মদনের প্রসঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে শোনা যায়, একটা মাতালের সম্বন্ধে কী আর বলা যায়। উত্তরে দেরি না করে মদন জানান, তিনি আগে মদ খেতেন না, শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারীই নাকি তাঁকে মদ্যপান করিয়েছেন প্রথম। অর্থাৎ স্বীকার করে নিলেন, তিনি মদ্যপান করেন, কিন্তু শিখিয়েছেন ওই নেতা। এই নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় সমস্ত কথা কয়েক লক্ষ পোস্টে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। মদন এবারেও বেপরোয়া। বলছেন 'ওহ লাভলি'।