হিন্দি ছবির বিশিষ্ট কিংবদন্তি অভিনেতা জিতেন্দ্র তাঁর জীবন সায়াহ্নে এসে উপলব্ধি করেছেন, জীবনে ভোগের থেকে ত্যাগেই বেশি আনন্দ পাওয়া যায়। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি কাজের ব্যাপারে অত্যন্ত শৃংখলাপরায়ণ হলেও ব্যক্তিগত জীবনে খুবই আনন্দপ্রিয় মানুষ ছিলেন। বন্ধুবান্ধবদের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি করতেন। সুখাদ্য, মদ্যপান, ধূমপান প্রভৃতির প্রতি আসক্ত ছিলেন। নিয়মিত মদ্যপান ও ধূমপান করতেন। এছাড়া জর্দা পান খেতেন। আর জুয়া খেলারও শখ ছিল। বিশেষত বিদেশে গেলে ক্যাসিনোতে গিয়ে জুয়া খেলে প্রচুর টাকা ওড়াতেন।
সেই সময় নায়ক হিসেবে জিতেন্দ্রর চাহিদা ছিল তুঙ্গে। দিনে দু-তিন শিফটে কাজ করতেন। বম্বে ও মাদ্রাজে চুটিয়ে কাজ করতেন। দুহাতে রোজগারও করেছেন। প্রায় তিরিশ বছর হল, তিনি আর ছবিতে অভিনয় করেন না। তাঁর কথায়, তিনি ক্যামেরার মুখই দেখেননি বহু যুগ। সেই আনন্দপ্রিয় জিতেন্দ্র আগের থেকে অনেক বদলে গিয়েছেন। প্রায় ২৪-২৫ বছর আগে নিয়মিত মদ্যপান, ধূমপান ও বেহিসেবি জীবনযাপনের ফলে তিনি শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। তখন একদিনে জিতেন্দ্র চিরতরে মদ্যপান, ধূমপান, মশলাদার খাবার, জর্দা পান সব ছেড়ে দেন। এবং সংযমী জীবনযাপন শুরু করেন।
এই সংযমী জীবনযাপন করার পরে জিতেন্দ্র স্বীকার করেছেন, তিনি তাঁর আগের জীবনের ভুলগুলোর জন্য অনুতপ্ত। তাই এখনকার নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের উদ্দেশে তিনি সর্বদা বলে থাকেন, তিনি জীবনে যে ভুল করেছেন, সেই ভুল যেন তারা না করে। জিতেন্দ্র বলেছেন, মদ্যপান ও ধূমপান থেকে তারা যেন বিরত থাকার চেষ্টা করে। জিতেন্দ্র বলেছেন, সমস্ত নেশা ত্যাগ করার পরে তিনি উপলব্ধি করেছেন, তিনি অনেক স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন, এবং তাঁর সুস্থ ও সতেজ থাকার নেশা ধরে গেছে। শরীর থেকে নির্গত রাসায়নিক তাঁকে সর্বদা চাঙ্গা করে রাখে।
জিতেন্দ্র এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি জানেন, বহু মানুষের জীবনে নানান সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যা বা টেনশন থেকে মুক্ত হতে লোকে মদ্যপান ও ধূমপান করে থাকেন, যা তিনি নিজেও এক সময় করেছেন। কিন্তু এখন মনে হয়, এতে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও হতাশা আরও বেড়ে যায়। যুবকদের বারংবার জিতেন্দ্র এই কথাটাই বলতে চান যে মদ্যপান ও ধূমপান পরিত্যাগ করো এবং সুস্থ থাকো।
জিতেন্দ্র আরও জানিয়েছেন, অল্প বয়সে তিনি শুটিং ও পার্টি নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকতেন যে তাঁর ছেলেমেয়েদের সময়ই দিতে পরেননি। তুষার ও একতা যে কিভাবে বড় হয়েছে, তাও তিনি জানতে পারেননি। এর জন্য আজ তাঁর অনুশোচনা আসে। তবে তাঁর ছেলেমেয়েরা তাও যে তাঁকে এত ভালবাসে, তার জন্য তিনি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এখন জিতেন্দ্র নাতির সঙ্গে সময় কাটিয়ে খুব পরিতৃপ্তি পান। সংসারে সবার সঙ্গে সময় কাটিয়ে জিতেন্দ্রর আনন্দে দিন কাটে।